‘কলিজা টানি ছিঁড়ি ফেলবো- একবারে টানি ছিঁড়ি ফেলবো তোমার, চেনো তুমি- এ চেনো! খুব পাওয়ার দেখাও জামায়াতের, একবারে নিশ্চিহ্ন করি দেবো জামায়াত। চেনো বিএনপি! কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিসুর রহমান জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক নেতাকে এই হুমকি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে তাঁর এই হুমকির একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিসুর রহমান এ ধরনের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, ‘রাগের মাথায় ওইভাবে বলেছি। পরে বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পর ছেলেটা গোপনে ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।’ বিএনপি নেতা জানান, তিনি জামায়াতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতেও প্রস্তুত।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভুক্তভোগী ওই নেতার নাম রুবেল মিয়া। তিনি ফেডারেশনের উপজেলা শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে বিএনপি নেতা আনিসুর রহমানকে কিছু অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়। ভিডিওতে তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি থানায় গিয়ে বসে অভিযোগ দেব, ওই উক (জামায়াত নেতা রুবেল) কে ধর, তারপর আমি আসব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল মিয়া বলেন, ‘গত ২১ এপ্রিল উপজেলা ভূমি অফিসে আমাদের দুইজন কর্মীকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মারধর করেন। এর প্রতিবাদে আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই— “একনায়কত্ব চলে গেছে, আরেকটা একনায়কত্ব আসছে”। এছাড়া, মঙ্গলবার স্থানীয় চাঁদামারী উচ্চবিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের জন্য অভিভাবক সমাবেশ হয়। সেই সভায় উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আহমদ আলী ভাইকে সভাপতি করার প্রস্তাব আসে। কিন্তু উপজেলা বিএনপি থেকে স্কুলে গিয়ে তাঁর নাম কেটে দেয়। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নাম রেখে দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করি। এই দুটি ঘটনায় তাঁরা আমাকে বিকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে থানা এলাকার একটি ওষুধের দোকানে দুর্ব্যবহার করেন। আমাকে থাপ্পড় মারে। হত্যার হুমকি দেয়। জামায়াতকে মুছে ফেলার হুমকি দেয়।’
রুবেল বলেন, ‘আমি বিষয়টি আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে থানায় একটি জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আহমদ আলী বলেন, ‘আপনাদের মতো আমরাও ভিডিওটি দেখেছি। এটি একধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ। আমরা আমাদের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
‘বিএনপি নেতা আনিসুরের নেতৃত্বে স্কুল-কলেজে দখলবাজি, টেন্ডারবাজি ও কমিটি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এই বিষয়গুলোর সমাধান হওয়া দরকার,’ বলেন এই জামায়াত নেতা।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান বলেন, ‘রুবেল মিয়া (ভুক্তভোগী) আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে এবং ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট করেছে। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। আমি তাঁকে ডেকে বিষয়টি বলেছি। তখন রাগের মাথায় বলেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি, সে গোপনে ভিডিও করছে। তাঁকে থানায় নিতে চাইলে সে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে। পরে তাঁর সঙ্গে মীমাংসা হয়। আমরা একসঙ্গে চা খেয়েছি। কিন্তু সে ওই ভিডিওগুলো দেয়নি, খণ্ডিত ভিডিও ছেড়েছে। বিষয়টি সে ঠিক করেনি। আমাদেরও সম্মান আছে।’
দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘রাগের মাথায় বলেছি। দরকার হলে জামায়াতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করব।’