কুমিল্লায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ইন্ধনে গড়ে উঠেছে ২০টি কিশোর গ্যাং । সংগঠনটি পর্দার আড়ালে থেকে শহরে অরাজকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। সব ধরনের শেল্টার পেয়ে দিনে-দুপুরে অস্ত্র হাতে মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের শক্তি সামর্থ্য জানান দিচ্ছে গ্যাংগুলো।
কিশোর গ্যাং দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মধ্যে, তাদের সক্রিয় হওয়া নিয়ে শহরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুষ্কৃতি বন্ধে মাঠে নেমেছে মহানগর ছাত্রদল এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের ২০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে যে কুমিল্লা শহরের প্রধান সমস্যা হলো মাদক ও কিশোর গ্যাং। এই দুটি সমস্যার উপর নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যৌথ বাহিনীর তৎপরতার কারণে নগরীর যুবদলগুলো আগে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি হঠাৎ করেই তারা এই কাজে মেতে উঠেছে।
গত শুক্রবার ১০-১২টি কিশোর গ্যাং একত্রিত হয়ে নগরীর রানীর দিঘীরপাড়, আদালতপাড়া, ফৌজদারি, মোগলটুলী, তালপুকুরপাড়, ঝাউতলাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। মিছিলও করেছে তারা। এতে নগরবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সূত্র জানায়, কুমিল্লা নগরীতে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০টি কিশোর গ্যাং চক্রকে ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। অজ্ঞাত স্থানে বসে এ সংগঠনের নেতারা কিশোর গ্যাংগুলোকে অস্ত্র এবং অর্থ সরবরাহ করছে। এতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গ্যাংগুলো।
এরই মাঝে নগরীতে রতন, ঈগল, র্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিবিক, মডার্ন, রকস্টার, ডিস্কো বয়েজ, বস ফ্লাইং মোড, বার্থ ফর ফ্লাইং, ম্যাক্স, হ্যালো স্টার, হর্স বয়, টাইগারসহ ২০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এর ফলে শহরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। এদিকে, গত ৮ বছরে কিশোর গ্যাং কর্তৃক কমপক্ষে ১২টি হাই-প্রোফাইল খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই গ্যাংগুলি মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধের সাথে জড়িত।
শহরের তালপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা সালেহ আহমেদ বলেন, “আমার মেয়ে মডার্ন স্কুলে পড়াশুনা করে। শুক্রবার আমাদের বাড়ির সামনে কিশোর দল অস্ত্র মহড়া করে। এখন আমি আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠানো এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। আমার মতো অনেক অভিভাবকও একই আতঙ্কে আছেন।
কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা অজ্ঞাত স্থানে বসে অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ করে ২০টি কিশোর গ্যাংকে সক্রিয় করেছে। নানা সোর্সের মাধ্যমে আমরা এসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। নগরীতে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছাত্রলীগ এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ দমনে আমরা মাঠে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। এসব অপরাধীদেরকে প্রশ্রয় নয়, যথাযথভাবে দমন করতে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে মহানগর ছাত্রদল।
কুমিল্লা মহানগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তারা কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করছে। তারা মূলত জনসাধারণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের এ ধরনের অপকর্ম আমরা কঠোরভাবে বন্ধ করব।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা শুক্রবার শহরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মিছিল করা যুব গ্যাংগুলোর ছবি এবং ভিডিও সংগ্রহ করেছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন যুব গ্যাংয়ের ২০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংগুলোর হঠাৎ উত্থানের পেছনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ইন্ধন থাকতে পারে। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”