কিশোরগঞ্জ-২ আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ আমলে শেষ তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া, এই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা চারবার জয়লাভ করেছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলের কমপক্ষে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য আগ্রহী। তাদের প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এবার জামায়াত এই আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে। দলটি ইতিমধ্যেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বর্তমানে নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা তাদের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালীকরণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা স্থানীয় বিভিন্ন সভা, সমাবেশ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জোরালো উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
এই আসনের বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, আরেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আখিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান কাঞ্চন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা জানান, কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নির্দেশনায় প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলায় সাংগঠনিক ইউনিট গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর সভা-সমাবেশ এবং দলের অনুসৃত অন্যান্য কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তাদের সমর্থনে নির্বাচনী এলাকা জুড়ে ব্যানার, পোস্টার এবং তোরণ টানানো হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, “হাসিনার আমলে আমি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অবিচল ভূমিকা পালন করেছি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আমি অত্যাচারী সরকারের হামলা, মামলা এবং নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি আশা করি দল সেই ত্যাগকে বিবেচনায় রেখে একজন পরিষ্কার ভাবমূর্তিসম্পন্ন প্রার্থীকে নির্বাচন করবে।”
একই দলের প্রার্থী রুহুল আমিন আখিল বলেন, “দলের অত্যন্ত কঠিন সময়ে আমি মাঠ থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। সেই বিচারে আমি এই আসনে এগিয়ে আছি।”
শফিকুল ইসলাম মোড়ল জামায়াতে ইসলামীর একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সিপিবির জেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান রুমি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি শরিফুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন।
জামায়াত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, “যদিও এই আসন থেকে জামায়াত সদস্যদের নির্বাচিত হওয়ার কোনও রেকর্ড নেই, আমরা এবার রেকর্ড তৈরির আশা নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলায় সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি গণসংযোগ বাড়িয়েছি।
জানা গেছে, এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোরঞ্জন ধর সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আনিসুজ্জামান খোকন। সেই সময়ে তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। ১৯৮৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. নুরুজ্জামান। এছাড়া ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির বীর মুক্তিযুদ্ধা বজলুল করিম ফালু, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল মান্নান, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, ২০১৮ সালে একই দলের নূর মোহাম্মদ ও ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন জাতীয় সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে ৪৯৩,৭৮৪ জন ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে ২,৪৭,৯৬৭ জন পুরুষ এবং ২,৪৫,৮১২ জন মহিলা এবং ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। মোট ১,০৩০টি বুথ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৭৯ জন পুরুষ এবং ৫৫১ জন মহিলা এবং ১৭০টি ভোটকেন্দ্রে ৪৮টি অস্থায়ী বুথ বা কক্ষ রয়েছে।