স্বৈরাচারী শাসনের কারণে দেশের তরুণ প্রজন্ম ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ তরুণ তাদের প্রতিনিধিদের ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের প্রায় একই দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বিএনপির তিনটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামতে চলেছে। তারা হলো জাতীয়তাবাদী যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল। এই তিনটি সংগঠনের নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে ‘যুব’ সমাবেশ করবেন। যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই সমাবেশগুলি করবে। ৭ মে চট্টগ্রাম থেকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের যুব ও যুব শ্রেণীর সমর্থকদের আকর্ষণ করার জন্য সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এই সমাবেশ যুব সমাজকে উজ্জীবিত করবে এবং তাদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য আহ্বান জানাবে। একই সাথে আগাম নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠনের বার্তা দেওয়া হবে।
আগামীকাল রবিবার তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছেন। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছেন। আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে তিনটি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২০২৩ সালের জুনে সারা দেশে বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছিল ওই তিন সংগঠন। তখন ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’ এই স্লোগানে সমাবেশ ব্যাপক সাড়া ফেলে তরুণদের মাঝে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন।
তিনটি সংগঠনের অন্তত ৫ জন দায়িত্বশীল নেতা একই তথ্য দিয়ে রবিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যুব ও যুব শ্রেণীর সমর্থকদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবে। রবিবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সমাবেশের নাম, কীভাবে, কখন এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা চূড়ান্ত করা হয়।
নেতারা জানান, পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে বিএনপির তিনটি সংগঠন যুব সমাবেশ করেছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও দেশের মানুষ এখনও তাদের ভোটাধিকার ফিরে পায়নি। গত ১৬ বছর ধরে তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। ছাত্র, যুব শ্রেণি নির্বাচন ইস্যুতে নানান ধূম্রজালের মধ্যে আছে।
তিনটি সংগঠনের নেতারা মনে করেন যে গণঅভ্যুত্থানের পর আট মাস অতিবাহিত হলেও নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছে এবং এখনও কোনও রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সরকারের একাধিক বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বেশির ভাগ দল ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের আহ্বান জানালেও সরকারের কথায় আশস্ত হতে পারছেন না নেতারা। এই অবস্থায় কৌশলে সরকারকে চাপে রাখতে চান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, মূলত এই সমাবেশের মাধ্যমে তিনটি সংগঠন আরও গতিশীল হয়ে উঠবে। সাংগঠনিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তরুণ ও যুবসমাজকে আহ্বান জানানো হবে।