এবার নতুন কৌশলে মাঠে নামছে আ.লীগ

পতিত আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, দলটি রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক সমাবেশ করেছে। এবার ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইন’-এর ব্যানারে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর ফিলিস্তিন’ স্লোগানে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য ইসলামিক ফ্রন্ট নামে একটি দলের প্যাডে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পেয়ে তা স্থগিত করা হয়েছে। তাই শনিবার বিকেলে রাজধানীর সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠে ভিন্ন ব্যানারে সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এ সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য সারা দেশ থেকে অনেক আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠন ঢাকায় এসেছে।

অভিযোগ রয়েছে যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওলামা লীগপন্থী আলেমদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাজার ও দরবারের নাম ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। ইসলামিক ফ্রন্টের নেতারা এতে সহযোগিতা করছেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন ইসলামী ফ্রন্টের নেতারা। গত দেড় দশকে হাসিনার হাত শক্তিশালী রাখতে সক্রিয় ছিল দলটি। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে ‘নিবন্ধিত’ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি তুলেছে ইসলামী এই দলটি। তবে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফ্রন্ট।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি, আমরা এটির উপরও বিশেষ নজর রাখব। যেকোনো নাশকতার প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

ছাত্র ও জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। বেশ কয়েকদিন নীরব থাকলেও, তারা হঠাৎ মিছিল করে তাদের অস্তিত্ব ঘোষণা করেন। শুরুতে ৫-১০ জন মিছিল করলেও, অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে, যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে নেতা-কর্মীরা তাদের গ্রেপ্তারের কৌশল পরিবর্তন করেন। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে তারা এখন ফিলিস্তিন ইস্যুতে মাঠে নামার চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইনের মিডিয়া ও যোগাযোগ উপকমিটির সদস্য আব্দুল হাকিম শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে জানান, ইসলামী ফ্রন্টের প্যাডে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ১৫ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ স্থগিত করা হয়। দলীয় ব্যানারে অনুমতি না পাওয়ায় অন্যরা নিরপেক্ষ ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করছে। এতে তিনি সংহতি প্রকাশ করেছেন।

সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ-সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সমাবেশ সম্পর্কে পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ। ২৬ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।’ এ ছাড়াও বিতর্কিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরীও তার ফেসবুক পেজে সমাবেশের প্রচার চালান। ওই পোস্টে আবার লাইকও দিয়েছেন ছাত্রলীগের জাকির। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে নেতাকর্মীদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপেও সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইনের মিডিয়া সেলের সদস্য অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। মঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়টি নতুন করে ফিলিস্তিনের সাথে যুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সারা দেশ থেকে অনেকেই ঢাকায় এসেছেন। প্রায় ৫০,০০০ লোকের সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে।” সমাবেশে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত তাদের সাথে কোনও বৈঠক হয়নি। এই বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। আমরা সতর্ক থাকব যাতে এখানে ফ্যাসিবাদ শিকড় না বাড়াতে পারে।”

রাজনৈতিক নেতা এবং গোয়েন্দা সূত্রের মতে, , সমাবেশ আয়োজন করতে যাওয়া ইসলামী ফ্রন্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে খ্যাতি রয়েছে। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে তারা ৩৭টি আসনে চেয়ার প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছিলেন। এমনকি ৫ আগস্টের পরেও এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ‘নিবন্ধিত’ সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ইসলামিক পণ্ডিত তাদের নাম প্রকাশ না করে বলেন যে আওয়ামী উলামা লীগ এবং ইসলামিক ফ্রন্ট অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে ছিল। মূলত, তারাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে।

Scroll to Top