বাঁধ দিচ্ছে বাংলাদেশ, এবার ভাসবে ভারত

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপে যখন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মঞ্চে নড়াচড়া শুরু হয়েছে, তখন বাংলাদেশও একের পর এক আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতের ছড়ি ঘোরানোর প্রচেষ্টার জবাব দিচ্ছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো — মুহুরী নদীতে নতুন একটি বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ।

এই পদক্ষেপ ঘিরে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরায় চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তঘেঁষা ত্রিপুরার শহরগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনো বর্ষা শুরু হয়নি, তবু আগেভাগেই ত্রিপুরা প্রশাসনের মধ্যে অস্থিরতা দেখা গেছে। তড়িঘড়ি করে পাঠানো হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ দল, যারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, গত বছর আগস্টে ভারতের ত্রিপুরা থেকে হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে এবার বাংলাদেশ মুহুরী নদীর তীরে নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে বাঁধ নির্মাণ শুরু করতেই প্রতিবেশী ত্রিপুরার মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

ত্রিপুরার গণপূর্ত বিভাগের সচিব কিরণ গিট্টে জানিয়েছেন, ভারতও পাল্টা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে এই প্রকল্পটি একটি নিয়মিত নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, যেটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা আড়াল করতে রাজনৈতিক ইস্যু বানানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আত্মনির্ভরশীল কূটনীতির পথে যাত্রা শুরু করেছে। ভারত দীর্ঘদিন বাংলাদেশে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করলেও এখন পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভারত বেশ প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করছে।

এ প্রেক্ষাপটে এক কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক আবহে স্পষ্ট পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ এখন আর আগের মতো নিজের অধিকার নিয়ে নতজানু নয়, বরং সমান চোখে প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলার মানসিকতা দেখাচ্ছে।”

বাংলাদেশে মুহুরী নদীতে বাঁধ নির্মাণ শুধুমাত্র একটি অবকাঠামোগত প্রকল্প নয়, বরং এটিকে দেশের স্বনির্ভর ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

Scroll to Top