আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনসাধারণের তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। এর ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ৭৬ বছর বয়সী প্রাচীনতম দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দলের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা সহ বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতারা বর্তমানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এই পরিস্থিতিতে দলটি আবার সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। দেশের ভিতরে নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া এবং এই সংকট মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
ভারত ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কিছু আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, তাদের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা সহ তারা এখন মনে করছেন, দলের একজন মুখপাত্র বা নেতা দরকার দেশের ভিতরে—যিনি প্রকাশ্যে এসে সমস্যাগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করবেন, আত্মগোপন না করে।
এই আলোচনায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নামও উঠে আসছে।
তবে গ্রেপ্তার, মামলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির ভয়ে এ পর্যন্ত কেউই সামনে আসার সাহস দেখাননি। কেউই সেভাবে বিতর্কিত না হলেও, দলের অন্য কোনো নেতার পক্ষ থেকেও সামনে আসার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অবস্থানরত কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারা দল থেকে ঢাকায় কারও নাম মুখপাত্র বা কোনও পদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে চায় না। কারণ, কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলে তিনি মামলা বা গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে পারেন। তাদের এই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করছেন, ঢাকাসহ গ্রাম পর্যায়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা বেড়ে গেছে।
তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, যারা দেশের ভিতরে দলের সংগঠন চালানোর কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস দেখাবে, তারাই হবে দলের নেতা।
যদিও এখনো পর্যন্ত কেউ সেই সাহস দেখাননি।
তবে দলের নেতা-কর্মীরা এখনো ‘পরিশীলিত আওয়ামী লীগ’ বা শেখ হাসিনার বিকল্প চিন্তা করছেন না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ দেখা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, তারা একটি ষড়যন্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, তাদের সরকার পতনের আগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান তারা।
তবে অনুশোচনার প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তাই অন্য কোনো দলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিদেশে অবস্থানরত দলের আরেক নেতা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে—এমন আলোচনাও তাদের মধ্যে রয়েছে। তবে দল হিসেবে তারা এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
এই নেতা আরও জানান, তাদের দল এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে তারা ভবিষ্যতে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং শিগগিরই একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।