ভারতের উপর এবার উল্টো বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ ভারতের হঠাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় কঠোর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জারিকৃত একটি নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারতের বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মোদি সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে, কারণ এটি বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে সুতা, আলু, গুড়, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফলের রস, রেডিও, টেলিভিশন, সাইকেল, মোটরযানের যন্ত্রাংশ এবং মার্বেল স্ল্যাব।

এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে প্রয়োজনীয় সুতার প্রায় ৯০ শতাংশই ভারত থেকে আমদানি হয়। তবে এখন থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞাটি বাংলাদেশের স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুসারে এসেছে, যারা দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছিলেন। যদিও চীন ও তুরস্ক থেকেও সুতা আমদানি করা হয়, ভারতীয় সুতাই এতদিন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল। এই অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও অনস্বীকার্য। ভারতের একতরফা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ক্ষতি ছিল। এর আগেও ড. ইউনূসের “সেভেন সিস্টার্স” মন্তব্য এবং বাংলাদেশের চীনের প্রতি ঘনিষ্ঠ নীতিগ্রহণ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু পাল্টা জবাব দেয়নি, বরং একটি স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছে যে দেশটি আর একতরফাভাবে ভারতের উপর নির্ভর করতে চায় না। বরং নিজেদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছে না। প্রতিবছর ভারত বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ সুতা রপ্তানি করত, যার বাজার ছিল বিলিয়ন ডলারের। এবার ভারতের টেক্সটাইল খাত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, এই বাজারে বড় ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশের সরকার বলছে, এই সিদ্ধান্ত কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশীয় শিল্পকে রক্ষা ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই ভারতীয় টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গত ৫ আগস্ট ভারত রাজনৈতিক অজুহাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে কলকাতা, দিল্লি ও চেন্নাইয়ের হোটেল, হাসপাতাল ও শপিং মলগুলোতে বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে ফাঁকা হয়ে গেছে। চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিদের উপর নির্ভরশীল অনেক প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষতির মুখে। ভারত-নির্ভর বাণিজ্য চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ এখন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (RCEP)-তে যোগ দিতে আগ্রহী। এই জোটে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া সহ ১৫টি প্রভাবশালী দেশ রয়েছে, যারা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য কৌশলে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের নীরব সমর্থনও রয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গৃহীত কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রমাণ করে, আজকের বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী, দূরদর্শী এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দক্ষ ও প্রভাবশালী খেলোয়াড়।

Scroll to Top