ভারতের সহযোগিতা ছাড়া তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ পরিকল্পনা উপদেষ্টার

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ভারতের সহযোগিতা ছাড়া তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিস্তা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা এখনো যাচাই করা হয়নি।

রবিবার (২০ এপ্রিল) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “তিস্তা প্রকল্প—যদি ভারতের সহযোগিতা ছাড়া পানি না আসে, তাহলে কী হবে? বাস্তবে আমরা যে পরিমাণ পানি পাই, সেটার পুরোপুরি ব্যবহার কীভাবে করা যায়? জলাধার নির্মাণ করা যায় কি না বা কিছু পানি ধরে রাখা যায় কি না—এই নিয়ে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “কয়েক বছর আগে চীনের পক্ষ থেকে একটি খসড়া নকশা দেওয়া হয়েছিল, তবে এটিকে প্রকল্প বলা যায় না। এখনো আমরা নীতিগত পর্যায়েই রয়েছি—এখানে প্রকল্প করা সম্ভব কি না। বর্তমানে যেটুকু পানি আসে, তার ওপর ভিত্তি করে যদি ভালো একটি প্রকল্প তৈরি করা যায়, তখনই বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। চীন নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে এমন প্রকল্প করতে, তবে আগে আমাদের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।”

একই সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পকে ব্যর্থ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক চাহিদা বিবেচনায় চট্টগ্রাম উপকূলে বে টার্মিনালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

বিদায়ী সরকার বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল। তবে মাঝপথে প্রকল্পটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বলা হচ্ছে, নিয়মিত ড্রেজিংয়ের বিপুল খরচ ও কম গভীরতার কারণে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিবেচনায় সরকার এখন মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

সামুদ্রিক উপকূলে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে মেরিন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংক ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। পরে সেখানে চারটি টার্মিনাল যোগ করা হবে, যার মধ্যে দুটি পিপিপির মাধ্যমে নির্মাণ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপিওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “সমুদ্র থেকে বড় ঢেউ যাতে বন্দরে না আসে, সেজন্য বে কোয়ার্টার নির্মাণ করতে হয়। পাশাপাশি বন্দরের পশ্চাদভূমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে।”

এ সময় তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তার ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, এদিন একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সরকার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে চলমান প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

Scroll to Top