তুচ্ছ ঘটনায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৬) খুনের ঘটনায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের আহাজারি যেন থামছেই না। রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পারভেজের মৃতদেহবাহী গাড়ি কাইচান গ্রামে তার বাড়িতে পৌঁছানোর পর গ্রামবাসীরাও শোকে মর্মাহত হয়ে পড়েন।
রাত ৯টার দিকে তার গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নিহত পারভেজ কাইচান গ্রামের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী মো. জসিম উদ্দিনের একমাত্র ছেলে। জসিম উদ্দিন ও পারভীন ইয়াসমিনের এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তার ছোট বোন জুইমনি ঢাকার মাইলস্টোন কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
তুচ্ছ ঘটনায় সহপাঠীদের হাতে পারভেজের নৃশংস হত্যাকাণ্ড জসিম উদ্দিনের পরিবারের উপর শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিরুনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও নিহত পারভেজের চাচাতো ভাই মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পারভেজ ও তার ছোট বোনকে শিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাবা জসিম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতে বসবাস করছিলেন। তবে ছেলের হত্যার খবর শুনে আজ (রবিবার) সকালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এদিকে, বাড়িতে পারভেজের লাশ আসার খবর শুনে কাইচান গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামের শত শত পুরুষ ও মহিলা জসিম উদ্দিনের বাড়িতে ছুটে আসেন পারভেজের লাশ দেখতে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে কাঁদতে শোকাহত গ্রামবাসীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পারভেজের মা পারভীন ইয়াসমিন তার ছেলের বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। ছেলের শোকে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার আত্মীয়স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পারভেজ খুবই ভদ্র ও বন্ধুসুলভ ছেলে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির সময় যখন পারভেজ বাড়ি আসত, তখন সবার সাথে দেখা করত, কথা বলত। কিন্তু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সহপাঠীদের হাতে খুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
নিহত পারভেজের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, পারভেজ ছিল আমার কলিজার টুকরা। বিশ্বব্যাংকের একটি দাতা সংস্থার ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি ছেড়ে লাখ টাকা কামিয়ে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করানোর জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছেলেকে তুচ্ছ কারণে খুন করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলের তিন খুনি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কেন তারা গ্রেপ্তার হলো না। আমি চাই প্রশাসন আমার ছেলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুক। এই সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হোক। তাহলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। এদিকে, পারভেজের মরদেহ আসার আগেই ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাদিম সাদ্দামসহ নেতাকর্মীরা কাইচান গ্রামে তার বাড়িতে ছুটে যান। এ সময় তারা পারভেজের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে সমবেদনা জানান।