তিস্তায় চীন চিকিৎসায়ও চীন, তবে ভারত এবার কি গ্যালারির বাইরে

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা পানিবণ্টন ইস্যুতে অবশেষে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। ভারতের নীরবতা আর অজুহাতের রাজনীতির মাঝেই এবার এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছে চীন। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর বিষয়টিতে নতুন গতি এসেছে।

বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের অংশ হিসেবে রংপুর অঞ্চলে ১,০০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা চীনের পক্ষ থেকে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের স্মারক উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।

হাসপাতালের জন্য রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় ১২ একর জমি নির্ধারণের কাজ চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের অনাগ্রহের বিপরীতে চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও কৌশলগত ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রস্তাবিত এক খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশকে ৩৭.৫% এবং ভারতকে ৪২.৫% পানি দেওয়ার কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে সেই চুক্তি আজও আলোর মুখ দেখেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, মূল সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও, মমতার আপত্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পানি প্রাপ্যতা আটকে রেখেছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক প্রকল্প হয়েছে, যেখানে মমতার মত না নিয়েই কেন্দ্র এগিয়েছে।

ড. ইউনুসের চীন সফরের পর স্পষ্ট হচ্ছে যে বাংলাদেশ আর দিল্লির দয়া বা অপেক্ষার উপর নির্ভর করতে চাইছে না। ইতোমধ্যে ঢাকা ও বেইজিং ২০২৬ সাল পর্যন্ত POWERCHINA-র সঙ্গে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট (TRCMRP)-এর মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করতে সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে।

এমন বাস্তবতায় ভারতের জন্য শুধু কূটনৈতিক নয়, কৌশলগত চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। যেখানে এক সময় নেপাল ও ভুটান ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, সেখানেও এখন তারা স্বাধীন পথ বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা ভারতের ঐতিহ্যগত কৌশলগত অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ করছে।

তিস্তা চুক্তি ভারতের দীর্ঘদিনের ‘একতরফা সুবিধা’ নেওয়ার এক প্রতীকী উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। ভারতের কূটনৈতিক পরিকল্পনা একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান। এখন তিস্তা যদি চীনের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ পায়, তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং ভারতকেই নতুন করে হিসাব-নিকাশ করে অগ্রসর হতে হবে।

Scroll to Top