পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার জন্য চারুকলায় নির্মিত ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’তে আগুন দেওয়ার ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে। অভিযুক্ত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রাকিব, যিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করার পর থেকে গ্রেপ্তার অভিযান জটিল হয়ে পড়েছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, আবেগপ্রবণ হয়ে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, যার ফলে সে আত্মগোপনে চলে যেতে পারে। তবে রবিউল ও তার মদদদাতাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টার আগেই তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে এবং সম্ভাব্য হলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারও করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে ডিএমপির এমন আশাবাদের পরও পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পরও অভিযুক্ত রবিউলকে গ্রেপ্তারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি জানায়নি পুলিশ।
রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভিডিও দেখে অভিযুক্তকে শনাক্ত করেন। তাদের দাবি, অভিযুক্ত রবিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলে থাকতেন এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হলে তার উপস্থিতি দেখা যায়নি।
আরবি বিভাগের এক শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ জানান, “আমরা ভিডিও দেখে সহজেই তাকে চিনেছি। কয়েকদিন আগে সে বিজয় ৭১ হলের সামনে এসে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়েছে। এখনও তার ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ভাষা দেখা যাচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরাও ভিডিও দেখে ধারণা করছি অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীই। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।”
এদিকে, এই আগুন লাগানোর ঘটনার পর সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মন্তব্য করেন, “চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা।”
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।