আলোচিত মডেল ও ২০২০ সালের ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ বিজয়ী মেঘনা আলমকে ঘিরে রাজধানীতে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। সোমবার রাতে হঠাৎ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে একদল ব্যক্তি তাকে আটক করে, যারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়েছিল। ঘটনাটি সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে জানিয়েছিলেন মেঘনা নিজেই।
লাইভে আতঙ্কিত মেঘনা বলেন, “ওরা বলছে আমার বাসায় মাদক আছে! আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে!” তিনি আরও জানান, অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা তার ফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে যায়। লাইভ চলাকালীনই বাসার দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টানা ২৪ ঘণ্টা মেঘনার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মেঘনাকে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার পরিবার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ অভিযোগে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস দেখছেন।
মেঘনার বাবা দাবি করেন, তার মেয়ে সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে ছয় মাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ছিলেন। রাষ্ট্রদূত বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং গত ৪ ডিসেম্বর আংটি বদলও হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এ কারণে মেঘনা সম্পর্ক ছিন্ন করেন ও আংটি ফিরিয়ে দেন।
এরপর থেকেই রাষ্ট্রদূত ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন মেঘনার বাবা। তার দাবি, প্রতিশোধ নিতে রাষ্ট্রদূত মেঘনাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
এই ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনসহ দেশের ৩৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, “এভাবে কাউকে আটক করা ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী।” তারা মেঘনার দ্রুত মুক্তি দাবি করেন এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মেঘনার বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আইনগতভাবে সঠিক নয়। যদি সত্যিই তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ থেকে থাকে, তাহলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচার হোক।”
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা ও উদ্বেগ।