ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রির গোপন ৭ দফা চুক্তি ফাঁস

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গোপন সাত দফা চুক্তির অস্তিত্বের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক এবং আলোচনার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ‘গোলামি চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে অনেকে দাবি করেন।

বিভিন্ন সূত্র দাবি করে যে ১৯৭১ সালের অক্টোবরে একজন উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তা এবং তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাত দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তির বিষয়বস্তু কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি মুজিবনগর সরকারের অনেক সদস্যও চুক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

নুরুল কাদেরের “২৬৬ দিনের স্বাধীনতা” বইয়ের ৩২৫ পৃষ্ঠায় চুক্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। লেখকের মতে, চুক্তিটি এতটাই একপেশে ছিল যে স্বাক্ষর করার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
কি ছিল সেই সাত দফা চুক্তিতে? চুক্তির কথিত শর্তাবলীতে উঠে এসেছে কয়েকটি গুরুতর বিষয়:

১. প্রশাসনে শুধু মুক্তিযোদ্ধারা: যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, শুধু তারাই প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবে। অন্যদের বরখাস্ত করে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সেই পদে বসানো হবে।

2. নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না: স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনী থাকবে না।

3. প্যারামিলিটারি গঠন: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি আধাসামরিক বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়।

4. বাণিজ্যিক সম্পর্ক: ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য হবে ওপেন মার্কেট ভিত্তিক, তবে সব লেনদেন ব্রিটিশ পাউন্ডে নিষ্পন্ন হবে।

5. ভারতীয় সেনা অবস্থান: স্বাধীনতার পর প্রয়োজন অনুযায়ী ভারতীয় সেনা বাংলাদেশে অবস্থান করবে—এবং এর মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি।

6. যুদ্ধের নেতৃত্ব: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবে ভারতের সেনাবাহিনী। মুক্তিবাহিনী থাকলেও তারা উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবে না, এমনকি আত্মসমর্পণ দলিলেও বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি স্বাক্ষর করবে না।

7. পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত নির্ভরতা: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে।
মওলানা ভাসানী সেই সময় তার ‘হক কথা’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “ভারত বাংলাদেশকে বাঘের মতো ধরেছে এবং নিজস্ব স্বার্থে গোপন চুক্তি করেছে।তারা আমাদের গাছে তুলে মই নিয়ে গেছে।”* অনেকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার প্রতিদান চাওয়ার কৌশল ছিল এই চুক্তি।

যদিও এই তথাকথিত চুক্তির অস্তিত্ব এখনও বিতর্কিত, তবুও এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গভীর, রহস্যময় এবং সংবেদনশীল অধ্যায় হিসেবে অধ্যয়ন করা হচ্ছে। যদিও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবুও আলোচনা থেমে নেই।

Scroll to Top