বিএনপি একমাত্র দল, বিপদে-আপদে রুখে দাঁড়িয়েছে দেশকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে: ফখরুল

আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি একমাত্র দল, যারা প্রতিবার, প্রতিটি বিপদ-আপদে রুখে দাঁড়িয়েছে, তারা সব সময় রক্ষা করেছে বিপদ থেকে। বিএনপি সেই দল, যারা বাংলাদেশকে সব সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কুতুবের আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের কথা, তাদের বাক্য, তাদের বক্তব্য বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চায় না। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের গণতন্ত্রে যেতে হবে; সেইটা হচ্ছে ‘এ টু জেড’ ডেমোক্রেসি। এই ডেমোক্রেসি ছাড়া আমরা মনে করি না যে আর কোনো ব্যবস্থা আছে, যা জনগণের কল্যাণ করতে পারে।

‘কিন্তু আজ নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যেন এ প্রক্রিয়া (নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কারও সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে।’

দলের মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি জনগণের সাথে আছে, অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ তিনি দলের নেতা-কর্মীদের এমন কাজ করার নির্দেশ দেন যাতে জনগণ বিএনপি সম্পর্কে ভালো কথা বলে।

সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে এমন একটি সংকট দেখা দিয়েছে যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও আজ বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা তারা মোটেও মেনে নিতে পারে না। যারা আমাদের দেশকে রক্ষা করে, যারা সংকটের সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের আমরা কখনই বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।’

নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে যেতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি আছে, যাতে জনগণের কল্যাণ হতে পারে? আজ নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যাতে এই প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কাউকে সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে।’


চিনের প্রেসিডেন্টের পাঠানো বিমানে যে বিশেষ লক্ষ নিয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

আজ (২৬ মার্চ), অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সফরে যাচ্ছেন। তিনি চীনা রাষ্ট্রপতির পাঠানো একটি বিশেষ বিমানে দেশটিতে ভ্রমণ করবেন। এই সফরের মাধ্যমে তিনি ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করবেন। ড. ইউনূসের এই সফর বিশেষ করে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

সফরের উদ্দেশ্য
ড. ইউনূসের সফরের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ঢাকার পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে। বিশেষত, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন এবং চীনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

সফরের শুরুতে, আগামীকাল, ২৭ মার্চ, ড. ইউনূস চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি সম্মেলনে ভাষণ দেবেন এবং সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ চীনা রাষ্ট্রনেতাদের সাথে বৈঠক করতে পারেন। পরে, ২৮ মার্চ, তিনি বেইজিংয়ে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাত করবেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এরপর, ২৯ মার্চ, চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি থেকে ড. ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে, যেখানে তিনি একটি বক্তৃতাও দেবেন। তার সফরে মোট ৫৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে থাকছে, যা সফরের গুরুত্বের আরও একটি প্রমাণ।

চীনের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ
এটি ড. ইউনূসের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর, এবং বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন যে এই সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার একটি দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অনেকটা গভীর এবং বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষত চীন বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে চীন থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে পরিচিত।

চীনের ঋণ সুবিধা এবং প্রকল্প সহযোগিতা
এই সফরের সময়, বাংলাদেশ কর্তৃক চীন সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ করা যেতে পারে – অর্থাৎ, চীনের ঋণ পরিশোধের সময়কাল ৩০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো এবং ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা। বিশেষ করে বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের প্রেক্ষাপটে, এই ঋণ সুবিধাগুলি বাংলাদেশের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।

চীন সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য
বিশ্ব রাজনীতির আলোকে, বিশেষত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কের কারণে এই সফরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে সম্প্রতি কিছু টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের চীন সফর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে নতুন এক স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও এই সফর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “এই সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হবে।”

এছাড়াও, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, চীনে সম্পর্কের গতির ‘একটি ছেদ’ পড়েছে এবং এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং চীনের মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদার পেয়ে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশকে চীন তার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে পারে। এছাড়া, চীনের কাছ থেকে কিছু শিল্প ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশের জন্য তা নতুন উন্নয়ন সম্ভাবনা তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে।

যেহেতু চীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার, সেখানে বাংলাদেশের আমদানি খরচ কমানোর জন্য চীনের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়া যেতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রভাব
ভারত ও চীনের মধ্যে আঞ্চলিক আধিপত্য নিয়ে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করার বাংলাদেশের উদ্যোগ ভারতের সাথে সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই সফর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য খাতকে আরও লাভবান করার সম্ভাবনা বেশি।

অধ্যাপক সৈয়দা রোজানা রশিদ বলেন, “এই সফরের প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং চীনের সাথে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।”