বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা শারমিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও তার নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে শেখ হাসিনার মতোই, ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সেই অনুষ্ঠানে শারমিন আহমেদ বলেন যে, ২৫শে মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে শেখ মুজিব তাজউদ্দিন আহমেদকে কোনও নির্দেশ দেননি। ওই রাতে হাসিনার মতোই নেতাকর্মীদের ছেড়ে নিজের পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় রেখে উনি (শেখ মুজিব) পালিয়ে গেলেন।সেই রাতে তিনি তাজউদ্দিন আহমদকে বলে গেলেন ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও, পরশু হরতাল ডেকেছি। এখনো খোঁজ করলে সেই হরতালের পোস্টারগুলোও পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, যখন তিনি এই হরতাল ঘোষণা করেছিলেন, তখন আমরা আগেই জানতাম যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সেই সময় এই খবর ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিব এ সম্পর্কে সবকিছু জানতেন। তারপরও তিনি নেতাকর্মীদের মৃত্যুর মুখে রেখে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দিলেন না। তিনি একবারও বলেননি তোমরা সরকার গঠন করো, শুধু তাই নয়- তিনি কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাটুকুও দিলেন না।
শারমিন আহমেদ আরও বলেন যে শেখ মুজিব এবং তার বাবার মধ্যে সেই রাতে অনেক তর্ক হয়েছিল। বাবা বললেন, ‘মুজিব ভাই পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নাই যে, যুদ্ধের মুখে জাতিকে ফেলে দিয়ে নেতা ধরা দিয়েছেন। আপনি তো কোনো নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে না’। কিন্তু বাবার এসব কথা শুনে উনি শুধু বললেন ‘তোমরা যা করার করবে’। তখন বাবা বলেছিলেন, আপনি কী কোনো বৈঠক করে বলে দিয়েছেন যে, আপনার পরে চেইন অব কমান্ড কী হবে?
তিনি বললেন, “ফলস্বরূপ, এই সমস্ত কিছু নিয়ে বিশাল বিভাজন তৈরি হয়েছে।” এবং সেই রাতে, যখন আমার বাবা হতবাক মানুষের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন একজন তরুণ ব্যারিস্টার, আমিরুল ইসলাম এসে বললেন, “তাজউদ্দিন ভাই, আমি মুজিব ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আসবেন না। তিনি স্নান করেছেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য প্রস্তুত।”
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চাপা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তাজউদ্দিনের মেয়ে বলেন, “এখন পর্যন্ত অনেক কিছু চেপে রাখা হয়েছিল, আশা করা যায় সেগুলো বেরিয়ে আসবে। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাদ দিয়ে তারা লাফ দিয়ে ওই ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ করে ওনারা চলে গেছেন ৭২- এর দিকে। এটা তো ভয়াবহ।
প্রসঙ্গত, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালানোর পর শেখ পরিবার এবং জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে বিরোধ সামনে আসে। বঙ্গতাজের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ একাধিকবার দাবি করেছেন যে চার নেতার পরিবারকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন হাসিনা।