সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ. আরাফাত সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাথে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এবং দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
একই সাথে তিনি জোর গলায় বলেছেন যে দলের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে পুনর্গঠনের কোনো সুযোগ নেই। তার মতে, দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থাশীল।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে অজানা স্থান থেকে টেলিফোনে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এ. আরাফাত বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন কোনো শক্তি নেই যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এ দেশের জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ দেশের কোনায় কোনায় আওয়ামী লীগের অবস্থান। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো শক্তি নেই বাংলাদেশে। বাংলাদেশে রাজাকার, পাকিস্তানি ও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা নিষিদ্ধ হবে; আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে না। যে দেশ জন্ম দেয়, তাকে নিষিদ্ধ করা যায় না।
তিনি দাবি করেন যে ইউনূস এবং তার সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সাথে যেভাবে আচরণ করছেন, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, তারা (ইউনূস সরকার) বলে আসছিল, আমরা (আওয়ামী লীগ) নাকি গত ১৫ বছর ধরে ভালো নির্বাচন করিনি, আমাদের সময় নাকি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। তাহলে এখন তারা প্রশাসনকে দলীয়করণ করছে কেন? এক চিঠিতে এতগুলো লোক নিচ্ছে কেন? এখন কেন তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারছে না? প্রতিটি কি পয়েন্টে বসিয়ে রেখেছে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন।
সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ এ. আরাফাত আরও বলেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখনও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ১০০% জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখে। তাই নেতৃত্ব পুনর্গঠনের কোনও সম্ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না। তবে দলকে পুনর্গঠন বা দল হিসেবে সংগঠিত করা অন্য বিষয়।
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনূসের (ড. মোহাম্মদ ইউনূস) অধীনে নির্বাচন করব না। ইউনূস ও তারা গ্যাং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করছে তাতে তো মনে হচ্ছে নির্বাচন ও রকমভাবে হবে না।
তিনি আরও বলেন, তারা ৩২ নম্বর ভাঙলো ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বাসা ভাঙলো। তারপর যখন তাদের প্রতিরোধ করা হতো তখন সরকার ডেভিল হান্ট শুরু করল। যারা ভাঙছে তাদেরকে প্রটেকশন দিল। ’
জুলাইয়ের গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগ জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ৫ আগস্টের পর সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের পর কি তারা ক্ষমা চাইবে? তোফাজ্জল, মাসুদ এবং রাজীবের হত্যাকাণ্ডের জন্য কি তারা ক্ষমা চাইবে? আমি আগেই বলেছি যে আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন যা কিছু ঘটেছিল তার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে; কারণ আমরা সরকারে ছিলাম। এই দায় আমরা স্বীকার করেছি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এই (জুলাই-আগস্ট গণহত্যা) বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করেছিল। আমরা একটি কমিশন গঠন করেছিলাম। ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিচারও তো তারা করছে না। তারা এটাকে পলিটিক্যালি ব্যবহার করছে। এটার তো বিচার করতে হবে। আজকে কেন গণহারে মামলা হচ্ছে। তারা এটাকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের উপর দমন-পীড়ন করছে। এর অবজেক্টিভ হলো আওয়ামী লীগকে শেষ করা। যেটা সম্ভব না। এরা কোন বিচার করছে না। বিচার করলে আওয়ামী লীগই করত। ’