সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে ‘কাচা বাদাম’ শিরোনামের একটি গান ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মুহুর্তের মধ্যেই ব্যাপক ভাইরাল হতে দেখা। বলতে গেলে, বর্তমানে তরুণদের মুখে মুখেই এখন এই একটি গানই। আর এবার সেই গানটি গাওয়া মানুষটি সঙ্গে দেয়া করলেন বাংলাদেশের তরুণ ও ইউটিউবার মাহসান। জানা গেছে, মাহসান বুকের সমস্যা নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন। গিয়েছেন স্ত্রীসহ। সেখানেই খেয়াল করলেন দেশীয় সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে এক বাদাম বিক্রেতাকে নিয়ে হইচই। খুব ভালো করে দেখলেন তরুণ তরুণীরা ব্যাপকভাবে টিকটকে মেতেছেন এই বাদাম বিক্রেতাকে নিয়ে।
ওহ, তাঁর আগে বলে নিই, বাদাম বিক্রেতা ভূবন বাদ্যকরকে চেনেন? শুনেছেন তাঁর গান? যদি এর উত্তর না হয় তাহলে আপনি অনলাইনে সক্রিয় দাবি করে থাকলে সেটি ভুল করবেন। এই মুহূর্তে ভূবন বাদ্যকর একটা ট্রেন্ড। গোটা বিশ্বের বাংলাভাষাভাষীর কাছে খুব পরিচিত নাম। এই মুহূর্তে সকল সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে ভূবন বাদ্যকরকে নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।
যাহোক, মাহসান একজন ইউটিউবার। দেশের পরিচিত ইউটিউবারদের মধ্যে একজন। ভাইরাল বিষয় দেখলেই ছুটে যান। তাঁর মাথায় ভুত চাপলো ভূবন বাদ্যকরের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর আগে খুবই বলে নেওয়া প্রয়োজন ভুবন বাদ্যকর ইন্টারনেটে কেন আলোচনার শীর্ষে, তাই না?
ভূবন বাদাম বিক্রি করেন, ভাজা বাদাম নয়, কাঁচা বাদাম। ভাজা বাদামের অপকারিতা আর কাঁচা বাদামের উপকারিতা নিয়ে একটি গান বেঁধেছেন তিনি। এই গানের কথা যুক্ত হয়েছে টাকা ছাড়াও কিসের বিনিময়ে বাদাম বিক্রি করেন, যেমন ভাঙা মোবাইল, সিটি গোল্ডের পুরনো জিনিস, মাথার চুল ইত্যাদি। গানের কথায় এসব আর অদ্ভুত সুর তরুণরা ইন্টারনেটে পাওয়া মাত্রই লুফে নেয়।
বাংলাদেশের ইন্টারনেটে হুট করেই জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া ভূবন বাদ্যকরকে নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও তার গান নিয়ে টিকটক লাইকিতে তুমুল ঝড় ওঠে। অনেক সঙ্গীতশিল্পী গানটিকে লুফে নিয়ে নতুন সংগীত আয়োজনে গাইতে শুরু করেন। র্যাপ যুক্ত গান তৈরি হয়ে যা অসংখ্য।
মাহসান যাবেন ভূবন বাদ্যকরের সঙ্গে দেখা করতে। কলকাতায় পথ জেনে নিলেন, মোটামুটি যতটা জানা যায়, হাওড়া থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে চেপে বসলেন। ৬ ঘণ্টা পর যে স্টেশনে নামলেন সেটা ভুল স্টেশন। রামপুরহাট স্টেশনে কথা বলে জানলেন বীরভূমের যেখানে যেতে চায় মাহসান সেটা আরো চার স্টেশন পূর্বে। তার মানে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এদিন আর যাওয়া যাবে না। হোটেলে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন মাহসান।
কলকাতা থেকে গতরাতে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন মাহসান স্বপ্ন। বললেন, ‘ভাই আমি যে কি বিপদে পড়ছিলাম। চার স্টেশন সামনে চলে গেছি। এমন একটা এলাকা সেখানে থাকার জায়গাও নাই। পরে সেখান থেকে আমরা তারাপীঠ চলে আসি। সেখানে ভোর চারটা পর্যন্ত ছিলাম। ৫ টার সময় একটা ট্রেনে উঠে আমরা দুবরাজপুরে নামি। দুবরাজপুর ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কুড়ালজুড়ি গ্রামে আসি নানা পথ ভেঙে। এটা এমন একটা দুর্গম এলাকা, সঙ্গেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য।’
সকালে অটো থেকে নামতেই দেখা হয় ভূবন বাদ্যকরের সঙ্গে। প্রথমে জড়িয়ে ধরেন মাহসান। তারপর ভূবন বাদ্যকরের সঙ্গে কথা বলেন। খুব মনোযোগ দিয়ে গান শোনেন। ততক্ষণে ভিড় জমে যায় ওই এলাকায়। এরপর ভূবন যেখানে থাকেন, সেখানে নিয়ে যান মাহসানকে। এক জীর্ণ পলিথিনে ছাওয়া মাটির ঘরে থাকেন ভূবন। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে। এক ছেলের বৌ ও নিজের পরিত্যক্তা বোন।
মাহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা অসহায় দরিদ্র লোক ভূবন বাদ্যকর। তিনি এখন ভাইরাল। ইন্টারনেটে তার গান নিয়ে মানুষজন বিনোদন পাচ্ছে। অথচ তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। আমি একটা ভিডিও করেছি, সেখানে তিনি নিজের ফোন নম্বর বলে দিয়েছেন। সেই ফোন নম্বরে মানুষজন যোগাযোগ করতে পারবে।’
কেন ভাইরাল এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল মাহসানের কাছে। কালের কণ্ঠকে বললেন, আসলে তার গানের কথা স্বাভাবিক না। ইন্টারনেটে মানুষজন অস্বাভাবিক বিষয়গুলোকেই খুঁজে বেড়ায়, হয়তো এতে বিনোদন পায়। আর গানের সুরে এক অদ্ভুত বিষয় রয়েছে, যা একবার কানে গেলে মনে হয় আরেকবার শুনি। এসব কারণেই তার গাওয়া গান ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভূবন বাদ্যকর ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তাঁর বাসায় ছুটে যান বিধায়ক অনুপ কুমারা সাহা। বাদামওয়ালা ভূবনের এই গানের সুরের টানে ছুটে আসেন অনেকে। শুধু গান শোনা নয়, গানের পাশাপাশি তাঁর কাছে ক্রেতারা বাদামও কেনেন। শুধু টাকা দিয়ে নয়, পুরনো সিটি গোল্ডের চেন, চুড়ি, হাতের বালা, মোবাইল ভাঙা, হাঁসের পালক, মাথার চুল ইত্যাদির বিনিময়েও বাদাম কেনা যায় তাঁর কাছ থেকে। দৈনিক আয় ছিল ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। এখন কিছুটা বেড়েছে।
মাহসান সেদিনই কলকাতায় ফিরে এসেছেন। এখনো সেখানেই রয়েছেন। ফোনে কালের কণ্ঠকে জানালেন, তিনি চিকিৎসার জন্য আরো কয়েকদিন থাকবেন। সুযোগ পেলে ভূবনের হালনাগাদ তথ্য নিয়ে ফিরবেন।
তবে শুধু মাহসানই নয়, বাদাম বিক্রেতা ভূবন বাদ্যকরকের গাওয়া এ গানটি রিমিক্স করে শেয়ার করেছেন অনেকেই। যা রীতিমতো বিনোদন প্রেমি ভক্তদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তবে এর থেকেও মজার ব্যাপার হলো, ভূবন বাদ্যকর নিজেই জানতেন না যে এ গানটি গেয়ে তিনি এতটা জনপ্রিয়তা পাবেন।