বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খলেদা জিয়া। গত বেশকিছু দিন হলো রাজধাণী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসধীন রয়েছেন তিনি। তবে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেয়ার পরিকল্পনায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো মত দেয়নি সরকার। ফলে এই মুহুর্তে দেশেই হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা।
তবে এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত দুদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি কিংবা আশান্বিত হওয়ার মতো উন্নতিও হয়নি। একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ অবস্থাকে কোনোভাবেই ভালো বলা যাবে না। এখনই তার উন্নত চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া না হলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কাই বেশি।
এদিকে, খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, তার শরীর ভালো না। ডাক্তাররা তো বললেন, তারা আর এখানে তার চিকিৎসা করতে পারছেন না। তাদের যতটুকু করার, ততটুকুই করেছেন। বাকি চিকিৎসা তারা করতে পারবেন না। দেশে তা সম্ভবও নয়। দেশের বাইরে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না দিলে আর কী করার আছে। একজন অসুস্থ মানুষ, তাকে বাইরে যেতে দেবে না, এটা তো হতে পারে না। সরকারের তো দায়িত্ব এটা। চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা এগুলো তো সরকারের দায়িত্ব। মানুষের জান বাঁচানো ফরজ। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচালে আল্লাহ খুশি হন। এখন সরকার কেন জান বাঁচাতে চাচ্ছে, না আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে ম্যাডামের অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক আছে। এখন এ স্বাভাবিক অবস্থা কতদিন থাকে, সেটিই দেখার বিষয়। কারণ তার বর্তমান বয়স, তার শরীরে যে ধরনের রোগ রয়েছে, তাতে যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। কয়েকদিন আগে তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সেই আশঙ্কা কথা জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বড় দুইটি সমস্যা হচ্ছে লিভার আর শরীরে রক্তক্ষরণ। হঠাৎ করে তার হিমোগ্লোবিন কমে যায়, আবার কখনো রক্তক্ষরণ হয়। তার সঙ্গে লিভারের সমস্যা তো আছেই। ফলে, এতোগুলো জিনিস নিয়ন্ত্রণে রেখে তার চিকিৎসা করা দেশে এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও আমরা, এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা এবং বিদেশে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাটা দিতে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর নিতে বিএনপির অনেক নেতাই হাসপাতালে গেলেও সবাই সিসিউইতে যাওয়ার অনুমতি পান না। সিসিউইতে চিকিৎসকদের বাইরে প্রায় নিয়মিত তাকে দেখতে যান ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি আর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তাদের মাধ্যমে বাকিরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কূটনৈতিকরা উদ্বিগ্ন। আর এ কারণে গত ২৯ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সরকারের কাছে জানতে চান। শুধু তাই নয়, তারা বিএনপির কাছ থেকেও নিয়মিত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আপডেট নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কূটনীতিকদের নিয়মিত আপডেট জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ এ কমিটির সদস্যরা।
এ নেতা আরও জানান, খুব শিগগিরই খালেদা জিয়ার বিষয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র তৈরি করা হচ্ছে। এমনিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কূটনীতিকদের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানেও খালেদা জিয়ার বিষয়টি আসবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৬ দিন চিকিৎসাধীনের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ১২ নভেম্বর আবারও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় বিএনপির গুণী এই নেত্রীকে। এখন পর্যন্ত ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থান রয়েছেন তিনি। তার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি রাখছে না চিকিৎসকরা।