অপরাধীদের দমনে কঠোর অবস্থানে সরকার, চলছে সাঁড়াশি অভিযান

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের মধ্যে সরকার আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত ধর্ষণ, খুন, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক পদক্ষেপ নিলেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পথে হেঁটেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

‘অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’—এই নীতিতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ডিবিও ‘অল আউট অ্যাকশনে’ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রবিবার (৯ মার্চ) আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বৈঠকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জড়িতরা যে মতাদর্শ, গোষ্ঠী বা ধর্মেরই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এতদিন সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল, কিন্তু এখন থেকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যে ৭১টি পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সিটিটিসি, এটিইউ, এপিবিএন এবং র‍্যাবের টহলদলও সক্রিয় রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার) ডিএমপির ৫০টি থানার আওতাধীন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, রাজধানীতে আরও বড় পরিসরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে আমরা আরও কঠোর হবো।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‍্যাবও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ‘রোবাস্ট প্যাট্রল ও বিশেষ চেকপোস্ট’ স্থাপন করা হয়েছে। র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশব্যাপী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে জানান, ‘সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে—এ কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। এখন তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের কার্যক্রম চলছে, আর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার তৎপর রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য লক্ষাধিক চাকরির ব্যবস্থা করা হবে এবং তরুণদের জন্য জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে।’

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আরও সক্রিয় হয়েছে। ডিবির একাধিক দল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অল আউট অ্যাকশন’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ডিবি।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের বিষয়ে আমাদের নীতি স্পষ্ট—জিরো টলারেন্স।’

তিনি আরও জানান, রমজান মাসে আর্থিক লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় শপিং মল, ব্যাংক-বীমা, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিবির বিশেষ টিম ছদ্মবেশে এসব এলাকায় অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করবে।

Scroll to Top