দুদকের গোপন ফাঁদে আটকা ১২ প্রকৌশলী: টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্ধকার দুনিয়া উন্মোচিত

গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক প্রভাবশালী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নতুন করে অনুসন্ধানে নেমেছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই প্রকৌশলীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববর্তী সরকার আমলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনুসন্ধান করা হলেও, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বেশিরভাগই আইনের জাল থেকে রেহাই পেয়েছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, যদি প্রভাব খাটানো না যায়, তাহলে অন্তত এক ডজন প্রকৌশলী কঠিন ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং শরীফ আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

দুদকের নথি অনুযায়ী, যেসব প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তারা সবাই গণপূর্তের দুর্নীতি চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এদের মধ্যে আছেন গণপূর্তের ‘টেন্ডার ডন’ জিকে শামীম, প্লট বাণিজ্যের হোতা গোল্ডেন মনির এবং বালিশকাণ্ডের মূল ব্যক্তি সাজিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহাদত হোসেন।

তদন্তে জানা গেছে, এই প্রকৌশলীদের অনেকেই সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে, সাবেক মন্ত্রীরা বিভিন্ন ঠিকাদারদের সহায়তা দিয়েছেন এবং টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তদন্তের আওতায় থাকা প্রকৌশলীদের তালিকায় রয়েছেন—সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন, ড. মঈনুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম সোহরাওয়ার্দী, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, ফজলুল হক মধু, মো. ইলিয়াস আহমেদ ও মুমিতুর রহমান।

দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী জানিয়েছেন, সরকারি দপ্তরগুলোতে দুর্নীতি নির্মূল করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে, এবং প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রকৌশলী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন। কেউ কেউ নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদ গড়ে তুলেছেন, কেউ আবার বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।

এই প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। যদি তারা দুদককে প্রভাবিত করতে না পারেন, তাহলে শিগগিরই তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

Scroll to Top