ঢাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মারা যেতে পারে ২ লাখ মানুষ

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে এমন এক অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে তিনটি টেকটোনিক প্লেট একত্রিত হয়েছে। ফলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বরাবরই থাকছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বড় বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, এসব ক্ষুদ্র ভূকম্পন ভবিষ্যতে ভয়ংকর ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিতে পারে।

কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, এ অঞ্চলে ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেট বিপরীতমুখী হয়ে চলাচল করছে, যেখানে ইন্ডিয়া প্লেট ধীরে ধীরে বার্মা প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে—একটি সাবডাকশন জোন তৈরি করছে। জিপিএস পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ থেকে ১.৫ মিটার সংকোচন হচ্ছে, যা ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এমন মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে, তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হবে ঢাকা শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত ভবনগুলোর কারণে একটি বড় ভূমিকম্পের ধাক্কায় অন্তত ১ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। আর এতেই প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং আরও ৫-৭ লাখ মানুষ ভবনের নিচে আটকে পড়তে পারেন।

ভূমিকম্পের পরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। খাদ্য সংকট, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষদের প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইতিহাস বলছে, বড় ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত এই অঞ্চলে প্রতি ১০০০-১৫০০ বছরে একবার ঘটে। ১৭৬২ সালে সংঘটিত ‘গ্রেট আরাকান ভূমিকম্প’ ছিল ৮.৫ মাত্রার, যা চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লাকে তছনছ করে দেয়। এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে ৮.৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল।

সরকারি পর্যায়ে ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তুতির অভাব এখনো প্রকট। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৮ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যা ভূমিকম্প হলে কী করা উচিত সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স ও আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারকাজের প্রস্তুতির চেয়ে আগেভাগে সতর্কতা এবং সচেতনতা বাড়ানো বেশি জরুরি। ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে—এমন বিষয়গুলো শেখানোর জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের মতে, সরকার যদি ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাজেটের ১ শতাংশ ব্যয় করে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে পারে, তবে বিপর্যয়ের সময় প্রাণহানি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।

সরকারি উদ্যোগ থাকলেও জনগণের সচেতনতা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি বাড়ানো জরুরি। অন্যথায় একটি বড় ভূমিকম্পে ঢাকার ভয়াবহ ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে।

Scroll to Top