গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের আগেই দলটি নির্বাচনের বিষয়ে পরিকল্পনা করছিল। রাজনৈতিক মহলেও তাদের নিয়ে কৌতূহল ছিল। বিভিন্ন ইস্যুতে দলটির নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছেন।
অরাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা এবং সবার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। সেই ধারাবাহিকতায়, এনসিপি এখন বিএনপিসহ চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজিপি)। চতুর্থ দলের নাম এখনো প্রকাশ হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, দল গঠনের আগ থেকেই এনসিপির নেতারা নির্বাচনী জোট গঠনের পরিকল্পনা করছিলেন। অন্যদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত শিক্ষার্থীদের নিজেদের পক্ষে রাখতে চেষ্টা করছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আলোচনায় শুরুতে শতাধিক আসন দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তখন মাত্র ৫-৭টি আসনের প্রস্তাব দেয়। বর্তমানে বিএনপি ২০-২৫টি আসন ছেড়ে দিতে রাজি আছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, জামায়াত এনসিপির আত্মপ্রকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে। দলটি এনসিপিকে নির্বাচনী জোটে যুক্ত করতে চায়। তবে এ নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি সমমনা অন্যান্য দলের সঙ্গে বৃহত্তর জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে। নতুন দল যুক্ত হলে নির্বাচনের সমীকরণ বদলে যেতে পারে বলেও মনে করছেন জামায়াতের নেতারা।
তবে এনসিপির ভেতরে জামায়াতের সঙ্গে জোট করা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। দলটির একটি অংশ জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট করতে চায়। এনসিপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা থাকবেই। আমাদের দল খুব শিগগিরই প্রতীক চূড়ান্ত করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবে। নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি, পরিস্থিতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে জোটের বিষয়টি নির্ধারিত হবে।”
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।