শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত এখন এক উভয় সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশ তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে, এবং এখন ভারতকে এই অনুরোধ গ্রহণ করলেও বিপদ, আর প্রত্যাখ্যান করলেও বিপদ। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ নামক অনলাইন পত্রিকায় ‘দ্য কমপ্লেক্স রোড টু এক্সট্রাডিশন: উইল ইন্ডিয়া এগ্রি টু সেন্ড শেখ হাসিনা ব্যাক টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৩ই ফেব্রুয়ারি ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সব ডকুমেন্ট পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছে। এর আগে, ডিসেম্বর মাসে একটি নোট ভারবাল পাঠানো হলেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নয়াদিল্লি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘রিজার্ভ’ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো মন্তব্য করতে থেকে বিরত রয়েছে।
২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারছে। এই চুক্তিটি ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। তবে, শেখ হাসিনাকে ফেরত নেওয়ার বৈধতা থাকা সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক কারণে বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত যদি তাকে ফেরত দিতে রাজি হয়, তবে এই প্রক্রিয়া বেশ কিছু ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। পাঞ্জাবের রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রফেসর ড. সংগীতা তাক জানিয়েছেন, বন্দিবিনিময় চুক্তি যদিও টেকনিক্যাল দিক থেকে নিয়ন্ত্রিত, তবুও রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়গুলো এই প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত জটিল করে তুলবে।
ড. তাক আরও বলেন, ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানোর আবেদন জানিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের সাথে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং অন্যান্য প্রমাণ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর তার বিচার স্বচ্ছ এবং পক্ষপাতিত্বহীন হবে, বিশেষত রাজনৈতিক কারণে নয়।
এছাড়া, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করবে, চুক্তি অনুযায়ী সকল শর্ত পূরণ হয়েছে কি না এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভারত ও বাংলাদেশের উভয় দেশেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় কিনা। সেইসাথে, আদালত প্রক্রিয়া চলাকালীন, এটি নিশ্চিত করতে হবে যে হাসিনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
ভারতীয় বিচার বিভাগ পর্যালোচনা শেষে যদি এটি মেনে নেয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা এবং হাসিনাকে নিরাপত্তা সহকারে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে তাকে আদালতের অধীনে রাখা হতে পারে।
এমনকি, ভারত যদি এই প্রক্রিয়া শুরু করেও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো介সশক্তি প্রয়োগ করে, তাদের হস্তক্ষেপ এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এই অবস্থায়, ভারতকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা বাংলাদেশকে সাহায্য করবে, নাকি এটি প্রত্যাখ্যান করবে।
এই বিষয়টির পরিণতি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, যা ভারতকে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে।