জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার ক্ষুধা মেটাতে চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি, ভাতার কার্ড ও রেশন নিয়ে দুর্নীতি, এমনকি বিভিন্ন জায়গা দখল করে রাখা—সবই তাদের পরিকল্পিত পদক্ষেপের অংশ। এই অনৈতিক প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে এবং স্থায়ীভাবে নির্মূল করতে হবে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভোলা সদরের শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির রাইজিং মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর বাস্তবায়ন।
সামান্তা শারমিন আরও বলেন, আমাদের দেশের ২ হাজার মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগের সম্মান রক্ষা করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সময় আমরা দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়েছিলাম, কিন্তু ছয় মাস পর দেখা যাচ্ছে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—বাংলাদেশের স্বার্থে আমরা বিভক্ত হব না, কোনো বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টাও সফল হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজকাল অনেকে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু তরুণ জনগোষ্ঠী যারা জীবন দিয়ে এই দেশকে নতুন পথে এনেছে, তারাই নির্বাচনের নেতৃত্ব দেবে। যারা ১৫ বছরেও জনগণের সামনে আসতে পারেনি, তাদের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া হবে না। নতুন কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সামনে বড় বাধা হলো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো। তারা নিজেদের স্বার্থে জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। জনগণের প্রকৃত কল্যাণ যাদের হাতে সম্ভব, তাদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পুনর্গঠিত হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ছয় মাস ধরে তরুণদের নিয়ে কাজ করছে এবং দেশজুড়ে তরুণ নেতৃত্বকে খুঁজে বের করছে। পরিবর্তন আসবে তাদের হাত ধরেই, যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
তিনি বলেন, গত ৫৩ বছর ধরে জনগণকে শুধু ব্যবহার করা হয়েছে। জনসাধারণ তাদের ন্যায্য মর্যাদা আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কখনো প্রকৃত সংগ্রাম করেনি। তাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা দখল ও স্বার্থ রক্ষা। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের দায়িত্ব এখন জনগণের হাতে এসেছে। শহীদদের পরিবারগুলো স্পষ্টভাবে বলছে, তারা খুনি হাসিনার বিচার চায়, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, শেখ হাসিনা গণহত্যায় সরাসরি মদদ দিয়েছেন, তবুও বড় রাজনৈতিক দলগুলো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধ এবং আমরা এই দায়িত্ব পালন করব। বিভাজনের অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকেও অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জবাবদিহিতা না থাকলে আবারও ফ্যাসিস্ট শাসন তৈরি হবে, যা আমরা কখনোই মেনে নেব না। আগামী দিনে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করবে এবং যেকোনো বাধা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য সেলের সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই-আগস্টের শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।