প্রথম আলোর অপপ্রচার ১৭ বছর কারাগারে বাবর

লুৎফুজ্জামান বাবর—নেত্রকোনার জনপ্রিয় বিএনপি নেতা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঐতিহাসিক বিজয়ের পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। টানা পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় দেশে আসে কথিত সংস্কারপন্থী সরকার।

ড. ফখরুদ্দীন ও মইন উ আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার নিয়ন্ত্রিত এই সরকার লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করে। এরপর শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ ১৭ বছরের কারাবাস। গ্রেপ্তারের সময় বাবরের বয়স ছিল ৫০ বছর, আর বের হওয়ার সময় ৬৭। মিথ্যা মামলার ফাঁদে ফেলে তাঁকে নজিরবিহীনভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে প্রমাণ হয়, তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। কারো দয়ার ফলে নয়, আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মুক্তি পান তিনি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও বিরাজনৈতিকীকরণের নামে পরিচালিত এই ষড়যন্ত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে প্রথম আলো। এক-এগারোর সময় এই পত্রিকা যেসব ব্যক্তিকে টার্গেট করেছিল, বাবর তাঁদের অন্যতম।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার লাগাতার প্রচারণা চালিয়ে বাবরের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততার কল্পিত প্রেক্ষাপট তৈরি করে এই সংবাদমাধ্যম। প্রথম আলো প্রথমে জর্জ মিয়াকে সামনে এনে, পরে বিএনপির সম্পৃক্ততার গল্প সাজায়। মূলত ২১ আগস্ট হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দিতে যা যা প্রয়োজন ছিল, তার সবই যোগান দেয় এই সংবাদমাধ্যম।

এই মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাবরকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত বলেছে, মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। অথচ এই ভিত্তিহীন তথ্য প্রথম আলোর বিতর্কিত সাংবাদিক টিপু সুলতান প্রথম প্রকাশ করেন। শুধু ২১ আগস্ট মামলাই নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও বাবরকে ফাঁসানোর পেছনে ভূমিকা রাখে প্রথম আলো ও তাদের সহযোগী মহল। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার তখনকার সরকারকে দায়ী করার জন্য এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছিল, যাতে মনে হয়, বিএনপি সরকারই এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল।

এমনকি বাবরের বিরুদ্ধে প্রকাশিত আরেকটি ভিত্তিহীন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তিনি নাকি খালেদা জিয়ার সম্মতিতে বসুন্ধরার কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। বাবর মুক্তি পাওয়ার পর এই অভিযোগকে ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আইন অনুসারে, রিমান্ডের সময় কোনো ব্যক্তির দেওয়া তথ্য গোপনীয় থাকার কথা। কিন্তু প্রথম আলো সেই গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, যা আইনত অপরাধ। পরে দেখা গেছে, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তিই ছিল না।

২০০৭ সালের ৫ জুন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আরেকটি সংবাদ প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়, বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে পুলিশের নিয়োগে দলীয়করণ ও দুর্নীতি হয়েছে। অথচ প্রতিবেদনে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়নি। প্রথম আলো যেন তখন নিজেই আদালত হয়ে রায় দিত।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রথম আলোর মূল লক্ষ্য ছিল বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা। এই সময় তারা আওয়ামী লীগ ও ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বিএনপিকে জঙ্গিদের সহায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে। বিশেষ করে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও মিথ্যা প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই সংবাদমাধ্যম।

এখন আবার প্রথম আলো নতুন রূপে বিএনপিপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি বেগম জিয়ার প্রতিও ‘মেকি সহানুভূতি’ দেখিয়ে অতীতের অপপ্রচার ঢাকা দিতে চাইছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের প্রথম আলোর বেশিরভাগ প্রতিবেদন এখন অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু সচেতন পাঠকেরা তখনকার মুদ্রিত সংস্করণ সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অনেকেই মনে করেন, প্রথম আলোর সাংবাদিকতার অতীত কর্মকাণ্ডের অনেক হিসাব-নিকাশ এখনো বাকি রয়েছে।

প্রথম আলোর উদ্দেশ্যমূলক সাংবাদিকতার কারণে লুৎফুজ্জামান বাবরের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ১৭টি বছর। অথচ শেষ পর্যন্ত আদালতই প্রমাণ করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

Scroll to Top