‘শিবিরের ওপর দায় দিয়ে দাও’: রাকিব-নাছিরের ব্যক্তিগত আলাপ ভাইরাল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে এক সাংবাদিক উপস্থিত নেতাদের কাছে দুটি প্রশ্ন করেন। প্রথম প্রশ্নে তিনি জানতে চান, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একসঙ্গে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু ছয় মাসের ব্যবধানে কী এমন ঘটল যে কুয়েটে এই অস্থিরতা দেখা দিল? দ্বিতীয় প্রশ্নে তিনি জানতে চান, কুয়েটের ঘটনাটি কি কেবল সংবাদ সম্মেলনে সীমিত থাকবে, নাকি সিনিয়র নেতারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেবেন?

প্রথম প্রশ্নের পরপরই উপস্থিত ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরকে বলেন, ‘শিবিরের ওপর দায় দিয়ে দাও।’

বিভিন্ন টেলিভিশনের লাইভ ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের এই কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বেসরকারি টেলিভিশন যমুনার সরাসরি সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনের ১৯ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের সময় শিবিরের ওপর দায় চাপানোর ওই মন্তব্য শোনা যায়।

তবে, নাছির উদ্দীন সরাসরি ছাত্রশিবিরকে দায় না দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দোষারোপ করেন।

তিনি বলেন, “গতকাল কুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, তার মূল কারণ হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এর নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক, যা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করেছেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগে ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসে তিনটি অপরাধে লিপ্ত ছিল— জোর করে মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করা, গেস্টরুম নির্যাতন চালানো এবং ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়া। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর গেস্টরুম নির্যাতন ও জোরপূর্বক মিছিলে নেওয়ার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হলেও, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বাধা দেওয়ার প্রবণতা এখনো রয়ে গেছে, যারই এক উদাহরণ কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনা।”

এ সময় কুয়েটে ছাত্রশিবিরের কমিটি রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে নাছির বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানে না সেখানে শিবিরের কোনো কমিটি আছে কি না। যদি থেকে থাকে, তবে সেটি প্রকাশ্যে আনতে হবে।”

টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যের এই অংশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী সমালোচনা করে বলছেন, ছাত্রদল এখন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মতো আচরণ করছে এবং কোনো ঘটনা ঘটলেই শিবিরকে দায়ী করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সরোয়ার আলম খোন্দকার ফেসবুকে লিখেছেন, “প্রিয় অভিভাবক রাকিব ও নাসির ভাই, দু’জনে আগে একটু প্র‍্যাকটিস করে আসবেন। তাহলে ক্যামেরার সামনে ধরা খাবেন না! ছাত্রদলের কর্মীরা আর কতদিন এসব ব্যাখ্যা দিয়ে যাবে? এত বড় ভুল করেছেন, এখন কিছু লিখলেও সবাই হাসবে।”

এদিকে, ইয়াছিন বাঙ্গালী নামের একজন লিখেছেন, “এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতৃত্বের কারণেই সংগঠনটি আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছে।”

Scroll to Top