মির্জা আজমের বাসায় তিন ঘণ্টার অভিযান, যা যা পাওয়া গেলো

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের বাসায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া এ অভিযান চলে প্রায় তিন ঘণ্টা।

অভিযানে দুদক, র‌্যাব ও পুলিশের শতাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন বলে জানা গেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বাড়িটিতে বৈদেশিক মুদ্রা থাকার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হয়।

তবে অভিযানের ফলাফল সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। উদ্ধার করা কোনো সম্পদ বা কাউকে আটক করা হয়েছে কি না—সে বিষয়েও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

প্রসঙ্গত, মির্জা আজম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌকা প্রতীকে একাধিকবার জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।


বৃহস্পতিবার উপদেষ্টার পদ ছাড়ছেন নাহিদ, কারন কি শুধুই দলে যোগ নাকি অন্য কিছু?

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই পদত্যাগ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার হতে পারে নাহিদের শেষ কর্মদিবস, সেদিনই তার পদত্যাগের সম্ভাবনা প্রবল।

সূত্র জানায়, নতুন দল ঘোষণার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে নাহিদের পদত্যাগও সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামীকাল বুধবার তিনি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর সমাপনীতে যোগ দেবেন। তবে কোনো কারণে দল ঘোষণার তারিখ পেছালে তার পদত্যাগও বিলম্বিত হতে পারে।

নাহিদ ইসলাম সরকারের দায়িত্ব ছেড়ে শিগগিরই নতুন দলের নেতৃত্বে আসবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারিতেই আত্মপ্রকাশ করবে। নাহিদ ইসলাম, যিনি গণঅভ্যুত্থানের ঘোষক ছিলেন, তাকে আমরা জনগণের কাতারে ফেরার আহ্বান জানিয়েছি।”

নাহিদ ইসলামের নতুন দলের আহ্বায়ক হওয়া প্রায় নিশ্চিত, তবে সদস্য সচিব পদ নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আখতার হোসেনই এই পদে এগিয়ে আছেন।

সদস্য সচিব পদ নিয়ে অন্যদের মধ্যেও আলোচনা রয়েছে, যেমন—নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আলী আহসান জুনায়েদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। নাগরিক কমিটির একটি অংশ আখতারকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে থাকলেও অধিকাংশ নেতাই তার সমর্থনে রয়েছেন। ফলে আপাতত তাকে সদস্য সচিব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শনিবার থেকে সদস্য সচিব পদের বিষয়টি নিয়ে নাগরিক কমিটিতে মতভেদ তৈরি হয়, যা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষ আখতার হোসেনকে সমর্থন করলেও, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নাসীরুদ্দীনকে এই পদে চাইছেন। অন্যদিকে, কিছু সাবেক শিবির কর্মী আলী আহসান জুনায়েদকে সদস্য সচিব হিসেবে চান। এই মতানৈক্যের ফলে দল গঠনের আগে ভাঙনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

ফেসবুকে এই বিরোধিতার বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও যুক্ত হন। কিছু নেতা এমনকি আলাদা দল গঠনের হুমকি দেন। তবে সর্বশেষ রোববার বৈঠকে বসে অধিকাংশ নেতা আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করার পক্ষে মত দেন এবং আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন এই বিভেদকে বড় কোনো সমস্যা হিসেবে দেখছেন না। তিনি বলেন, “ফেসবুকে কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তবে এটি সংগঠনের কোনো আনুষ্ঠানিক সংকট নয়। দল ঘোষণার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে, জনগণের সমর্থনও পাচ্ছি।”

নতুন দলের ঘোষণার স্থান হিসেবে শহীদ মিনার বেছে নেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় এখান থেকেই একদফা দাবি এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের পাঁচ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। বিকল্প হিসেবে জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউও বিবেচনায় রয়েছে।

এদিকে, ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জনগণের মতামত সংগ্রহ করেছে, যেখানে তিন লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে। এস এম শাহরিয়ার জানান, “আমরা সব শ্রেণির মানুষের মতামত নিচ্ছি এবং জনগণের চাওয়া অনুযায়ী দল গঠনের পরিকল্পনা করছি।”

সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদেরও এই দলে যুক্ত করার আলোচনা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা থাকবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছি, তাদের উদ্যোগেই নতুন দল আসছে। সেই দলে যুক্ত হতে হলে সরকারে থাকা সম্ভব নয়। তাই আমি পদত্যাগ করব।”

নাহিদের পদত্যাগের কারণ শুধুই দলীয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়া, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো বড় পরিকল্পনা রয়েছে—তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।