হাসিনার নির্দেশেই কৌশলে বাদ দেয়া হয় সাত খুনের মাস্টারমাইন্ড শামীম ওসমানকে, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদী একসময় পরিণত হয়েছিল নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নীরব সাক্ষীতে। একের পর এক মরদেহ যখন ভেসে উঠছিল, তখন স্বজনদের কান্না ও শোকের মাতমে ভারী হয়ে উঠেছিল চারপাশ। ডুবুরিদের সহায়তায় উদ্ধার করা হয় সাতটি মৃতদেহ, যা পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হলে তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এ হত্যাকাণ্ডে র‍্যাব-১১ এর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল। আটক করা হয় র‍্যাবের তৎকালীন অধিনায়ক কর্নেল তারেক সাঈদ, যিনি তখনকার ক্ষমতাসীন দলের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা।

এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত নূর হোসেন ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে কলকাতা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর আদালত ২০১৮ সালে প্রধান অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেন এবং কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন।

তবে মামলার রায়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী শামীম ওসমানের নাম না থাকায় প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে তিনি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ায় অনেকের দাবি, তদন্তে তার ভূমিকা উপেক্ষিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কৌশলে বাদ দেয়া হয় সাত খুনের মাস্টারমাইন্ড হাসিনার ঘনিষ্ঠ শামীম ওসমান, তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে। তবে কেন এই হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়টি আড়ালে থেকে যায়।

সে উত্তর পরিষ্কার হয় ৫ আগস্টে হাসিনা পতনের পরপরই। সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থাকা একজন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ পাওয়া যায়, যে সাত খুনের ঘটনার সাথে হাসিনা সরাসরি জড়িত ছিলেন। র‍্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক ছাত্র জনতার বিপ্লবে হাসিনার পতনের পর আটক হলে, সাত খুনের সাথে জড়িত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

জিয়াউল হকের বয়ানে সরাসরি শামীম ওসমানের সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে আসে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা বিষয়টি সামনে আসে। ঘটনার শুরু থেকেই শেখ হাসিনা বিষয়টি জানতেন, এমনকি সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করে শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতেন হাসিনা। একই সাথে, হাসিনার নির্দেশে শামীম ওসমানকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়।

সাত খুন মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি। ফলে দণ্ডপ্রাপ্তরা এখনো শাস্তির চূড়ান্ত মুখোমুখি হননি।

Scroll to Top