প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্টে উল্লেখ করেন যে, গত আগস্টের শেষ দিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরকে জুলাই ও আগস্টের ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানান। এ সময় অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
কেউ কেউ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন পুরনো বাংলা প্রবাদ— “খাল কেটে কুমির আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।” অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, জাতিসংঘ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে এবং হয়তো এমন একটি আপসকামী প্রতিবেদন দেবে, যেমনটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যায়।
তবে অধ্যাপক ইউনূস তার অবস্থানে অনড় ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাক। তার বিশ্বাস ছিল, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা নিরপেক্ষভাবে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করতে পারে। যদিও দেশের সাধারণ মানুষ আগে থেকেই জানত, ওই সময়কালে কী ঘটেছে, কারা নির্দেশ দিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা কী ছিল। তবুও, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে, যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তার ফিরে আসার সম্ভাবনাও কার্যত শেষ। যদি আওয়ামী লীগ নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে বাদ দিয়ে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন এ বিষয়ে কোনো বিকল্প ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়নি।
তিনি ১৯৯০ সালের উদাহরণ টেনে আনেন, যখন স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন তার বয়স ছিল ৫৯ বছর এবং তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়। এরপরও, তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন কারণ তার একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক ছিল এবং তার শাসনামল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কোনো বিতর্ক হয়নি।
কিন্তু শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার শাসনামলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশিরভাগ ঘটনাই নথিভুক্ত করেছে। নির্বাচন নিয়ে কারচুপি, গুম, হত্যাকাণ্ড, ও নির্বিচার গ্রেফতার আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। যদিও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছিলেন, তবে তার শাসনামল নিয়ে বিতর্ক কখনোই থামেনি।
যদিও আওয়ামী লীগের প্রচারযন্ত্র ও ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে, জুলাইয়ের বিদ্রোহ ছিল ইসলামপন্থিদের ষড়যন্ত্রের অংশ, তবে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন এই প্রচারকে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছে।
সর্বশেষ তিনি লেখেন, “দুঃখিত, আপা! এটাই শেষ!!”