আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থান নিলেও, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে কিছু আওয়ামী লীগ নেতার বিএনপিতে পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষমতা হারানোর পর বিএনপিতে ভিড়তে চেয়েছেন মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তত এক ডজন নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
এতে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার, যিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন এবং তার প্রতিবেশী। সরকারের পরিবর্তনের পর সাত্তারের বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ও জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ আজাদের সঙ্গে তার ছবি ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, আবদুস সাত্তার সিরাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এছাড়া তিনি কাদের মির্জার ‘হেলমেট বাহিনীর’ সদস্য ও সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার রাতে এক স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী তার ফেসবুক আইডিতে সাত্তারের একটি ছবি পোস্ট করে জানান, সাত্তার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মুহূর্তেই ছবিটি ভাইরাল হয় এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তারের বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়।
সম্প্রতি বিএনপির নবগঠিত জেলা কমিটির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ আজাদের কাছে ফুল নিয়ে হাজির হন সাত্তার। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।
তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে আবদুস সাত্তার বলেন, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না এবং ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রদল ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিএনপির কিছু নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার জানান, সাত্তারের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি বলেন, “আমি নিজে তাকে দলের মিটিং থেকে বের করে দিয়েছি। এরপরও যদি কেউ তাকে জায়গা দেয়, সেটা তাদের ব্যাপার।”
এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ জানান, সাত্তার তাকে ঢাকায় এক ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন এবং সে সময় তাদের ছবি তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তিনি উপজেলা বিএনপির নেতাদের কাছে সাত্তারের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি সাত্তার আওয়ামী লীগের লোক হয়ে থাকেন, তাহলে আগেই কেন তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি? নবগঠিত জেলা কমিটির সঙ্গে তার সম্পর্কই বা কীভাবে তৈরি হলো?”