তারিক আহমেদ সিদ্দিক—এক সময়ের শক্তিশালী প্রভাবশালী ব্যক্তি। নানা বিতর্কে জড়ানো এই সাবেক মেজর জেনারেল গত ১৫ বছরে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের সাম্রাজ্য। দেশের প্রতিরক্ষা, ব্যাংক-বীমা, শিল্প-বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, জ্বালানি, এমনকি সামরিক বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও তার একচ্ছত্র প্রভাব ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এসব খাতের সংশ্লিষ্টদের চাপে ফেলে বিপুল অর্থ অর্জন করেছেন, যা দিয়ে দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য সম্পদ। ব্যবসায়ীদের কাছে তার নাম ছিল একপ্রকার আতঙ্ক।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারিক সিদ্দিক শত শত বিঘা জমি, অসংখ্য ফ্ল্যাট, প্লট, বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি, রিসোর্ট ও খামারের মালিক হয়েছেন। এমনকি শেখ পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদের হিসাবে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। সেনাবাহিনীতেও তার ব্যাপক হস্তক্ষেপের কথা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। মানবজমিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার গোপন বিনিয়োগ রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাচলে তারিক সিদ্দিকের বিশাল সম্পত্তির বিষয়টি নজর কেড়েছে। শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকের ভাই হওয়ায়, তিনি প্রায় বাধাহীনভাবে একের পর এক সম্পদ অর্জন করেছেন।
পূর্বাচলের ৩০০ ফিট মূল সড়কের সংলগ্ন এলাকায় তার ৫টি আবাসিক প্লট রয়েছে। বাড়িয়াছনি মৌজায় খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী তার নামে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি রয়েছে। রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং সংলগ্ন এলাকায় তার আরও ১৫০ শতাংশ জমির একটি মাছের ঘের রয়েছে।
এ ছাড়া রূপগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় তার নামে এবং তার পরিচিতদের মাধ্যমে শতাধিক বিঘা জমি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। দাউদপুর ইউনিয়নের বিরহাটাব গ্রামে মাদ্রাসার পাশে, দেবাগ্রাম মৌজায় ৯ বিঘা জমি, বাঘপাড়া মৌজায় ৩০০ শতাংশ জমি এবং ছায়াবীথি হাউজিং সোসাইটিতে বিলাসবহুল ৫ তলা ভবনের মালিক তিনি।
তারিক সিদ্দিকের সম্পত্তি কেনা ও বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মোল্লা। তার ভাষ্য মতে, তারিক সিদ্দিক তাকে চাপ প্রয়োগ করে জমি কিনতে বাধ্য করেছিলেন। এমনকি তাকে নির্যাতনের মুখেও পড়তে হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
পূর্বাচলের অন্যতম বিলাসবহুল আবাসিক প্রকল্প জলসিঁড়িতে তারিক সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের নামে ৪১টি প্লট রয়েছে। সেক্টর-১, সেক্টর-২, সেক্টর-৩, সেক্টর-১০ ও সেক্টর-১৫-তে এই প্লটগুলো অবস্থান করছে।
এ ছাড়া পূর্বাচল নিউ টাউনের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে তারিক সিদ্দিক ও তার স্ত্রীর নামে ১০ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে। স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের নামে কুলিয়াদী মৌজায় প্রায় ১৫ শতাংশ জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়াও রূপগঞ্জ, পুটিনা, কামালকাঠি মৌজায় তার নামে আরও বিপুল পরিমাণ জমির তথ্য পাওয়া গেছে।
অনেকের মতে, জমি কেনা ছিল তার নেশা। কম দামে কিনে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতেন হাউজিং কোম্পানিগুলোর কাছে। তার ছত্রছায়ায় থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।
এই সম্পদের পাহাড় কীভাবে গড়ে উঠল, তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে।