জাতিসংঘের সুপারিশ: বিলুপ্ত হতে পারে র‌্যাব?

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন সদস্যদের তাদের নিজ নিজ ইউনিটে ফেরানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ও সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের প্রবিধানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সংশোধন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বলপ্রয়োগ, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শর্টগানের জন্য ধাতব শর্ট ও গোলাবারুদ ব্যবহারের চর্চা বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বলেছে, সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর জন্য নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। পাশাপাশি জননিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কম প্রাণঘাতী কৌশল ও যোগাযোগমূলক পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গণগ্রেপ্তার, বেআইনি আটক ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধে পুলিশকে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহের ভিত্তিতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ ও নির্যাতন প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের জন্য ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন, দুর্নীতি দমন, ও জনআস্থা পুনরুদ্ধারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ও যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী, বিজিবির দায়িত্ব সীমিত করা, ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং আনসার ভিডিপিকে শুধুমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োগের আগে কঠোর মানবাধিকার যাচাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করে এমন কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে শান্তিরক্ষী মিশনে না পাঠানো, যারা অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

Scroll to Top