জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, এমনটাই জানিয়েছেন এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তবে বিএনপি এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সরকার যদি স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করে, তাহলে বিএনপি এতে অংশ নেবে না। এমনকি ভোট বর্জনের মতো কঠোর অবস্থানও নিতে পারে দলটি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় না। তাদের শীর্ষ নেতাদের মতে, এ সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল রয়েছে। বিএনপির আশঙ্কা, এ নির্বাচনের মাধ্যমে সদ্য গঠিত ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে চায় সরকার। তাই যদি অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে, তাহলে বিএনপি ও তাদের জোট ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় নির্বাচনকে তারা মেনে নেবেন না। তার ভাষায়, জনগণের প্রধান দাবি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সরকার। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যেখানে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের নির্বাচন আয়োজন করা সরকারের কৌশল মাত্র।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া এবং ছাত্রদের নতুন দলকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া। তার মতে, তাদের কোনো ক্যাডার নেই, তাই সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের তাদের ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চায়।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবহার করা হয়েছিল নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হাতিয়ার হিসেবে। বিএনপির শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও স্থানীয় নির্বাচনের এ পরিকল্পনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এরশাদ আমলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছিল নতুন পার্টি বানানোর ধান্দা। যদি জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হয়, তাহলে পরে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে। তবে এখন এর প্রয়োজন নেই।
তবে তিনি স্বীকার করেন, জনগণের সেবার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি হতে হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, স্থানীয় নির্বাচন নয়। যদি সরকার স্থানীয় নির্বাচনের দিকে এগোয়, তবে বিএনপি শুধু বর্জনই নয়, এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের কথাও বিবেচনা করছে।