ফের আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেয়া শুরু করছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আবারও ভারতের আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ গ্রহণ শুরু করেছে। শীতকালীন বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিরোধের কারণে আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি একজন সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ গ্রহণ করছে।

রয়টার্সের ভারতীয় সংবাদদাতা কৃষ্ণ এন. দাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে ভারতের আদানি পাওয়ার ২৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত ২ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ক্রয় করে আসছে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে আদানি একচেটিয়া মুনাফা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়। সে সময় এক ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় পরিচালিত হয়। বাংলাদেশও তখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ নেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, বর্তমানে তারা আদানি পাওয়ারকে প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে এবং সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু করার জন্য আদানিকে অনুরোধ করেছে। সোমবার বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে জানান, তাদের চাহিদা অনুযায়ী আদানি বন্ধ থাকা ইউনিটটি চালু করার চেষ্টা করলেও উচ্চ কম্পনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কিছু কারিগরি সমস্যার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, বকেয়া পরিশোধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন এবং বর্তমানে আদানির সঙ্গে বড় কোনো সমস্যা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিপিডিবির একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে আদানি পাওয়ারের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বাংলাদেশ তাদের কাছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছে। বিপরীতে বিপিডিবির চেয়ারম্যান সে সময় জানিয়েছিলেন, বকেয়ার পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ও আদানি পাওয়ারের বিরোধের মূল কেন্দ্রবিন্দু ২০১৭ সালের চুক্তি, যেখানে দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। রয়টার্সের পূর্ববর্তী এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদানি পাওয়ার থেকে বাংলাদেশ যে বিদ্যুৎ নিচ্ছে, তার মূল্য ভারত থেকে আসা অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। এই উচ্চমূল্য বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ চুক্তিটি পুনর্নিরীক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং চলতি মাসের মধ্যেই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণের পর আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

Scroll to Top