“অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’: বিতর্কের মুখে সরকারের নতুন অভিযান”

দেশজুড়ে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দমনে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অভিযানের নামকরণ ও এর কার্যক্রম নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের বিভিন্ন অভিযানের মতো এবারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ‘ডেভিল’ শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ সন্দেহভাজনদের আগেভাগেই ‘শয়তান’ আখ্যা দেওয়া কতটা যৌক্তিক—এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রথম দুই দিনে নিয়মিত ও সাধারণ আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা কি সত্যিই ‘ডেভিল’ সংজ্ঞায় পড়েন—এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, “কারো অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাকে ‘শয়তান’ বলা আইনের শাসনের পরিপন্থী।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এই অভিযানের ফলে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে এবং কীভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে—এটা স্পষ্ট করা জরুরি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ডেভিল শব্দের ব্যবহার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সত্যিকারের অপরাধীরা কি দেশেই আছে, নাকি যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে, তারা ভিন্ন উদ্দেশ্যে আটক করা হচ্ছে—এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি অভিযানের আইনি ভিত্তি ও মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “অভিযানে ‘ডেভিল’ শব্দ ব্যবহারের ব্যাখ্যা কী? মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।”

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। তবে অভিযানকে কেন্দ্র করে চলমান বিতর্ক ও জনমনে উদ্বেগের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।

Scroll to Top