রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব সংবলিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, কমিশনগুলোর সুপারিশ তিনটি ভাগে বিভক্ত—আশু করণীয়, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আশু করণীয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে, আবার কিছু প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমেই কার্যকর করা সম্ভব। সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
- স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন
- সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন আচরণবিধি
- সরকারি সেবাখাতের ডিজিটাল রূপান্তর
- নাগরিক সেবা প্রদানকারী দপ্তরগুলোর নিয়মিত গণশুনানি
- জবাবদিহিতার জন্য স্থায়ী নাগরিক কমিটি গঠন
- মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমিয়ে ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগ নির্ধারণ
- অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে একক প্রতিষ্ঠানের অধীনে আনা
- বিনিয়োগ-অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগ একীভূত করা
- নতুন প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর সংযোজন
- ১০টি বিভাগের আয়তনের পুনর্বিন্যাস
- জেলা প্রশাসককে “জেলা কমিশনার” এবং উপজেলা প্রশাসককে “উপজেলা কমিশনার” হিসেবে পুনঃনামকরণ
- উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপন
- ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন
- পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাধারণ ক্যাডার পৃথককরণ)
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
- বিচারকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়ন
- জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন
- উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত প্রতিষ্ঠা
- জাতীয় অ্যাটর্নি সার্ভিস স্থাপন
- ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন
- বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা
- অধস্তন আদালতে আইটি শাখা স্থাপন
- জুডিশিয়াল কমিশনের মাধ্যমে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ
- ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন
- নারী ও শিশুদের জন্য আদালতে বিশেষ স্থান সংরক্ষণ
- অনলাইনে সরকারি সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা
- আদালতে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধকরণ
- অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই
- মিথ্যা সাক্ষ্য ও আইনজীবী নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট বিধি প্রণয়ন
- মামলা জট কমাতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
- ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ
- আইনজীবীদের ফি নির্ধারণে লিখিত চুক্তি বাধ্যতামূলক করা
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
- পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র তদন্ত ইউনিট গঠন
- মানবাধিকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
- পুলিশ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি
- নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিশ্চিতকরণ
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
- নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন
- জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন
- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন
- নির্বাচন কর্মকর্তা সংক্রান্ত আইন সংশোধন
- নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধন
- রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি হালনাগাদ
- অনলাইন ভোটিং ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি পর্যালোচনা
দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ
- দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে ন্যায়পাল নিয়োগ
- কালো টাকা সাদা করার সুযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ
- প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা
- কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ
- রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ
- সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঘুষ লেনদেন দমন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
এই কমিশন আপাতত আশু করণীয় কোনো সুপারিশ দেয়নি। তাদের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, কমিশনগুলোর সুপারিশ তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে—আশু করণীয়, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি। আশু করণীয়গুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব সংস্কার কার্যকর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার অযথা সময় নষ্ট করতে চায় না এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে তিনি জানান, এ বছর ২২ ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের ২২ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত