সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আনসার উদ্দিন খান পাঠান সম্প্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের একটি বিতর্কিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তার পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যস্ত সড়কে বিচারপতির গাড়ির প্রতি স্যালুট না দেওয়ার কারণে বিচারপতি নিজেই এজলাস বসিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দেন।
তিনি লেখেন, ২০০৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক নর্থ বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। সেদিন সকাল ৭টায় রুটিন চেকের পর তিনি অফিসে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ওবায়েদ তাকে ফোন করে জানান, হাইকোর্টের এক বিচারপতি ফার্মগেট এলাকায় তিনজন সার্জেন্টকে তলব করে উচ্চস্বরে তিরস্কার করছেন এবং রাস্তাতেই তাদের শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
কারণ হিসেবে জানা যায়, ট্রাফিক সার্জেন্টরা বিচারপতির ফ্ল্যাগওয়ালা গাড়ি লক্ষ্য করেননি এবং স্যালুট করেননি। ব্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে তারা বিষয়টি খেয়াল করেননি। কিন্তু বিচারপতি ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে এজলাস বসানোর ঘোষণা দেন এবং সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী সময়ে, তিনজন সার্জেন্টকে ২০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয় এবং ইন্সপেক্টর ওবায়েদকে বন্ড দিতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় আনসার উদ্দিন খান পাঠানকেও হাইকোর্টে তলব করা হয়। তিনি জানান, আদালতে হাজির হলে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল না করার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। বিচারপতি মানিক নির্দেশ দেন, আইজিপির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিতে হবে যেন বিচারপতিদের প্রতি স্যালুট প্রদান করা হয় এবং পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আইজিপি শহুদুল হক এই নির্দেশে বিস্মিত হন এবং ক্ষমা না চেয়ে কোর্টে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। কিন্তু বিচারপতি মানিক তার ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এই ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে। আনসার উদ্দিন খান পাঠানের মতে, ট্রাফিক কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের প্রধান দায়িত্ব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা, এবং স্যালুট দেওয়া তাদের জন্য অগ্রাধিকার নয়। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আজও পুলিশ প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বিষয় হয়ে আছে।