জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক দল আসছে চলতি মাসেই। যদিও দলের নাম এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি, একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসছেন।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে নাহিদ ইসলামের সরকার থেকে পদত্যাগ এবং নতুন দলের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।
নাগরিক কমিটির একটি সূত্র জানায়, নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে নাহিদ ইসলাম শিগগিরই পদত্যাগ করতে পারেন। ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পক্ষ এবং নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
এছাড়া, নাহিদ ইসলাম যদি পদত্যাগ করেন, তবে নাগরিক কমিটি থেকে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আলী আহসান জুনায়েদ অথবা আখতার হোসেন উপদেষ্টা পদে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “দেশের মানুষ আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলটির ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের জনপ্রিয়তার কারণে নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, নতুন দলের নেতৃত্ব তাদের মধ্য থেকেই আসুক। এক্ষেত্রে সবার মতামত হলো, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেন আহ্বায়ক হন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
তবে গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় নাহিদ ইসলাম জানান, “আমি এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদ ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হই, তাহলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
নতুন দলের সম্ভাব্য নেতৃত্বের মধ্যে আছেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহবুব আলম ও অনিক রায়ও শীর্ষ নেতৃত্বে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হবে একটি প্রতীকী লংমার্চের মাধ্যমে। জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে শুরু হয়ে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়িতে গিয়ে লংমার্চ শেষ করা হবে। সেখানে দলটির ঘোষণা আসতে পারে।
চলতি মাসের প্রথমার্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করা হবে এবং এরপর দেশব্যাপী ১৫ দিনের লংমার্চের পরিকল্পনা রয়েছে। ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠন গঠনের কাজ চলছে।
নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হুসাইন জানান, “আমরা জনসাধারণের প্রত্যাশা ও সমর্থন দেখেছি। নতুন দল ঘোষণার আগে দেশব্যাপী সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করছি। ইতোমধ্যে প্রায় ২৫০টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।”
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারাই নতুন দলেও নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।