বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবার তাদের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশও পড়তে যাচ্ছে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির জালে, যা দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সহায়তা কর্মসূচিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যার মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত অন্যতম। শুধুমাত্র মিশর ও ইসরায়েলের সামরিক অর্থায়ন এবং জরুরি খাদ্য সহায়তা এই নীতির বাইরে থাকবে। আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বাংলাদেশে চলমান শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রেস উইং জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুশাসন, পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানা খাত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষত, এসব প্রকল্পে কর্মরত হাজারো মানুষের চাকরিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চলমান খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার একটি বড় অংশ আসে ইউএসএইডের মাধ্যমে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। সাম্প্রতিক চার বছরেই এই সহায়তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলার।
এই সহায়তা বন্ধ হলে শুধু ইউএসএইড সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলিই নয়, বরং ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনডিপি ও আইসিডিডিআরবি’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাও ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে এর গুরুতর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে, ইউরোপের কিছু দেশ—বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো—তাদের অর্থনীতির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি বৈদেশিক সহায়তা প্রদান করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র একাই ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৬৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছিল, যা বর্তমানে বন্ধ হওয়ার পথে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।