যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাজার হাজার ভারতীয় অভিবাসীর ওপর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটি প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে শনাক্ত করেছে, যাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অভিবাসীদের একটি বড় অংশ পশ্চিম ভারতের, বিশেষ করে পাঞ্জাব ও গুজরাটের তরুণরা। ভারত ইতোমধ্যে অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং এই সহযোগিতার অংশ হিসেবে অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় যাচাই করে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এড়ানো এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার কৌশল নিয়েছে ভারত। ট্রাম্প প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করতে এবং বৈধ অভিবাসনের পথ খোলা রাখতে এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, এইচ-১বি ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসার মতো প্রোগ্রামগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা ভারতের অন্যতম লক্ষ্য।
এছাড়া, ভারতের জন্য এই সহযোগিতার একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। বিদেশে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, বিশেষ করে খালিস্তান আন্দোলন, ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত অনেক নেতার উপস্থিতি এসব আন্দোলনের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে ভারত এই ধরনের আন্দোলনের সমর্থন কাঠামো দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সহযোগিতা ভারতের জন্য ইতিবাচক হলেও, বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। যথাযথ পুনর্বাসন এবং সহায়তার ব্যবস্থা না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী বসবাস করছে। যদিও বর্তমান উদ্যোগে ১৮ হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সবমিলিয়ে, অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা তার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার পাশাপাশি বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে এর সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর নির্ভর করছে এর সফলতা।