অবশেষে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন টিউলিপ

দুর্নীতির অভিযোগে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে অবশেষে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ লেবার পার্টির মন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক ব্রিটিশ গণমাধ্যম।

জানা গেছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করবে সরকারের নৈতিক ইস্যু বিষয়ক উপদেষ্টাদের একটি স্বাধীন দল, যারা মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে থাকে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “টিউলিপ সময়োপযোগী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি তার এবং পুরো তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি।”

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজন আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফের কাছ থেকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে, দুবছর আগে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে টিউলিপ বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন এবং এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।

সম্প্রতি এই বিষয়টি আবার সামনে আসায় টিউলিপ রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।


ইলিয়াসকে কখন কীভাবে গুম করা হয়, ফাঁস করলেন অপহরণে জড়িত র‌্যাব সদস্য

ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ‘আয়নাঘর’ নামক বন্দিশালা থেকে বহু বছর আটক থাকা অনেক বন্দি মুক্তি পান। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে সেখানে জীবিত পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে নিশ্চিত হয়, ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করা হয়েছে।

সিলেটের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বাধীন একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর তার লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই গুম ও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাবের সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

সোমবার দৈনিক “আমার দেশ” পত্রিকায় এই নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের করা প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলী গুম ও হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

জবানবন্দিতে তাহেরুল জানান, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে তিনি শেরাটন হোটেল থেকে ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন। মহাখালীতে পৌঁছে জিয়াউল নিজে আরেকটি টিম নিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ি বনানীর ২ নম্বর সড়কে থামিয়ে তাকে এবং তার ড্রাইভার আনসারকে অপহরণ করেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গুম তদন্ত কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে জানা যায়, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত র‌্যাবের দুই সদস্য এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তারা হলেন ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া ও ইমরুল। তাদের ক্লোজড ও অন্তরীণ করা হয়েছে।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে শেরাটন হোটেলে একটি বৈঠকের পর ইলিয়াস আলীকে তার বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর তাকে হত্যা করে যমুনায় ফেলে দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার প্রমাণ পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন। কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে এমন বহু গুম ও হত্যা সংঘটিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে নাটক করেছিলেন, যা ইলিয়াস আলীর পরিবারের কাছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

এই প্রতিবেদন গুম ও হত্যার ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে।