‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার—এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অভিমত জানানো হয়। বৈঠকে বলা হয়, সরকার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে এবং দেশের সংবিধান নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হতে দিচ্ছে না।
বিএনপির গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীও সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। দলটির নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে সরকার যদি ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারে, তা প্রশংসনীয় হবে এবং এটি সবার সমর্থনও পাবে।”
আজ মঙ্গলবার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কর্মসূচি ছিল, যেখানে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী’ আখ্যা দিয়ে ‘কবর’ রচনার ঘোষণা ছিল। তবে বিএনপি এ কর্মসূচি প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। দলের নেতারা মনে করছেন, সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।
বিএনপির নেতাদের মতে, নির্বাচন বিলম্বিত করতে একের পর এক নতুন ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে সংবিধান পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের মতো কর্মসূচি দিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। তাদের মতে, সংবিধান বা অন্য কোনো বিষয়, সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র জনগণের নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মাধ্যমে হবে—এর বাইরে কোনো গোষ্ঠী বা দলের কিছু করার অধিকার নেই।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্র কর্মসূচি এবং সংবিধান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নেতারা মনে করছেন, একটি রাজনৈতিক দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর ভর করে নানা ইস্যু তৈরি করছে, যাতে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়। সেই সংগঠনটি এই কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোক সমাগমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
সূত্র জানায়, বিএনপি এই বার্তা আগেই সরকারকে জানিয়েছিল এবং সরকার তা অনুধাবন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচিতে সায় দেয়নি। এরপর সংগঠনটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে, তবে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ছাত্রনেতারা পিছিয়ে যান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবিতে তারা নানা কর্মসূচি পালন করবে এবং এভাবে সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। নেতারা বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং জনগণের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ছাড়া বিকল্প নেই।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ছাত্রদের সমাবেশে ইতিবাচক জামায়াত:
জামায়াত ছাত্রদের ঘোষণাপত্র নিয়ে মন্তব্য না করলেও সমাবেশের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। দলটির প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ সমকালকে বলেন, “ছাত্রনেতৃত্ব দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। তারা রক্ত দিয়েছে, দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে এবং জাতি গঠনে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা জামায়াত স্বাগত জানায়।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্মসূচিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের ভূমিকা পরবর্তী সময়ে প্রকাশ পাওয়ার পর তাদের জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়, তবে কোন পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি।

