অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে চান এস আলম

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তার সম্পদ ও বিনিয়োগ নিয়ে বিরোধের সমাধানের জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাধান না হলে তিনি আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুল আলম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ একাধিক উপদেষ্টার কাছে একটি ‘বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিশ’ পাঠিয়েছেন। নোটিশে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তার সম্পদ জব্দ ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ক্ষতি পোষাতে সাইফুল আলম ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তবে তিনি এই পদক্ষেপ বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নয়, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে নিচ্ছেন। নোটিশে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে হওয়া দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও জানানো হয়, এস আলমের পরিবার ২০১১ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং ২০২০ সালে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তারা সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব লাভ করেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্যমতে, মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভানের আইনজীবীরা এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকার ও সরকারি সংস্থার কর্মকাণ্ড এবং অবহেলার কারণে এস আলম গ্রুপের বিনিয়োগ ও সম্পদের মূল্য আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিনিয়োগ চুক্তির অধিকার ও বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করছে। এ কারণে সরকারের সঙ্গে সাইফুল আলমের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

নোটিশে স্পষ্ট করা হয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা না হলে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার পথে হাঁটবেন সাইফুল আলম।


শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের চিঠি পাওয়ার পর যা জানালো ভারত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো কূটনৈতিক চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারত। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ তথ্য জানান।

এক ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা আজ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ সংবলিত একটি কূটনৈতিক চিঠি পেয়েছি। তবে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।”

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, সোমবার বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “ভারতকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য ফেরত চাই।” একই দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় আলোচনা চলছে।”

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।

এর আগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে তিনি ভারতে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “প্রত্যেক হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ভারতকে অনুরোধ করব, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে।”

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ নিয়ে ভারতের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।