জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: বাহাউদ্দিন নাছিম

বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন। শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ শত শত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগের ভূমিকার জন্য তাদের কি জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত?

এ পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টেলিফোনে কথা বলেন। সেই সাক্ষাৎকারটি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা যদি ভুল করে থাকি বা অন্যায় করে থাকি, তার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ক্ষমা চাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ ধরনের গোঁড়ামি আমাদের দলে নেই। আওয়ামী লীগ এ ধরনের মানসিকতার দল নয়।”

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে দলের কোনো অনুশোচনা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নাছিম বলেন, “অনুশোচনা করতে চাইলে তার জন্য তো স্বাভাবিক পরিবেশ প্রয়োজন। এখন আমরা কারাগারে, পাহাড়ে, জঙ্গলে, কিংবা নির্বাসনে আছি। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় মূল্যায়ন বা ভুল স্বীকার করার উপযুক্ত সুযোগ নেই। তবে পরিবেশ সঠিক হলে ভুল চিহ্নিত করে ক্ষমা চাওয়াও সম্ভব।”

দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মগোপন ও বিদেশে অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, “কৌশলগত কারণে অনেকেই দেশের বাইরে রয়েছেন। উপমহাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। যারা রাজনীতিকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় নিহতদের ঘটনায় সারা দেশে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাছিম বলেন, “দলের মন্ত্রী, এমপিসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনার নামেই আড়াই শতাধিক মামলা হয়েছে। শীর্ষ নেতারা কারাগারে, অনেকেই আত্মগোপনে। অথচ অভিযোগ করা হচ্ছে, এই আন্দোলন পরিকল্পিত ছিল। তাহলে গণহত্যার দায় কেন আমাদের ওপর?”

নাছিম আরও বলেন, “গণহত্যার বিচারের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন একজন প্রধান কৌঁসুলি, যিনি আগে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মামলা লড়েছিলেন। এটি কতটা সঠিক, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার।”

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের ভেতরে মূল্যায়নের পক্ষে কথা বলেছেন। তবে দমন-পীড়নের পরিবেশের মধ্যেও ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করে নাছিমের বক্তব্য দলে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে।


নজিরবিহীন অনিয়ম: আশ্রয়ণের ৬ ঘরে এসি-ফ্রিজ, দুই স্ত্রী নিয়ে বিলাসী জীবন আলতাফের

যশোরের মনিরামপুরের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নিয়ে ঘটেছে নজিরবিহীন অনিয়ম। ভূমিহীন পরিচয়ে একজন নিয়েছেন ৬টি ঘর, আরেকজন নিয়েছেন ৪টি। আবার অনেকেই ঘর পেলেও সেখানে বসবাস করেন না। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটিয়েছেন আলতাফ হোসেন। তিনি ৬টি ঘর দখলে নিয়ে ৩টিতে এসি লাগিয়েছেন, মেঝেতে দিয়েছেন টাইলস, এবং বিলাসবহুল আসবাবপত্র দিয়ে ঘরগুলো সাজিয়েছেন। দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকাদের নিয়ে তিনি সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।

মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘরের মধ্যে আলতাফের দখলে থাকা উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর ব্যতিক্রম। ২০২১ সালে নির্মিত এই ঘরগুলোকে নিজস্ব খরচে গোলাপি রঙ, গ্রিল, এবং এসি দিয়ে উন্নত করেছেন তিনি। আলতাফ দাবি করেছেন, তিনি প্রকৃত ভূমিহীন এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে পরিবারপ্রতি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন, যাদের অর্থায়নে এসব ঘর সাজানো হয়েছে।

আলতাফের ভাষায়, “আমাদের ঘরে টাইলস, এসি, ফ্রিজ লাগানো দোষের কিছু না। আমরা সেগুলো নিজেদের টাকায় করেছি।” তবে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি এই ঘরগুলো দখল করেছেন।

এমনই আরেক ঘটনা ঘটিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের আত্মীয় এজাজুল হক মধু। তিনি ৪টি ঘর দখলে রাখলেও সেগুলোর একটিতেও স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। তিনটি ঘর তার আত্মীয়স্বজনকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন, যা প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে।

এদিকে একই এলাকায় প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষ রয়েছেন ঘরবিহীন অবস্থায়। খাটুয়া গ্রামের ডলি খাতুন, যিনি পুরো পরিবারসহ প্রতিবন্ধী এবং কোনো জমি বা স্থায়ী ঘর নেই, তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করেও একটি ঘর পাননি। ডলির করুণ আর্তি, “আমরা সবাই অসহায়। কেউ যদি আমাদের একটা ঘর দিত, তাহলে বাঁচতে পারতাম।”

স্থানীয়রা বলছেন, ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের চাপে যথেচ্ছাচার করেছেন। প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজন।

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, “বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কি না তা তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, প্রতিটি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকৃত গৃহহীনরা রয়ে গেছেন ঘরবিহীন।