থানায় চলে এল রাসেল ভাইপার, যে কাণ্ড করল পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা কুঠিপাড়া, পিরোজপুর এলাকায় এখন রাসেল ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এবার যোগ হলো চারঘাট মডেল থানা । সোমবার রাতে হঠাৎ করে থানায় পাওয়া যায় রাসেল ভাইপারকে। এতে থানায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রাসেল ভাইপারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে সাপটিকে মেরে ফেলেছে পুলিশ।

মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসেন জানান, সোমবার রাতে থানার ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি রাসেল ভাইপার বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশ কর্মকর্তা-বাহিনীর সহায়তায় সাপটিকে মেরে ফেলা হয়। এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা কুঠিপাড়া, পিরোজপুর এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গেলেও এবারই প্রথম দেখা গেল চারঘাট থানা চত্বরে। এতে অফিসার-ফোর্সদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে থানা চত্বরে কীটনাশক প্রয়োগ করে আগাছা পরিষ্কার করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, থানাটি পদ্মা নদীর কাছাকাছি হওয়ায় সাপটি চলে আসছে। তিনি বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

রাসেল ভাইপার বাইট করলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও করনীয়:

*শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হবেন না।
*আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করুন: সাবান ও পানি দিয়ে কামড়ের স্থান ধুয়ে ফেলুন।
*বিষ ছড়িয়ে পড়া রোধ করুন: কামড়ের স্থানটিকে হৃৎপিণ্ডের চেয়ে নিচে রাখুন।
*শক্ত ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন: কামড়ের স্থানের উপরে, হৃৎপিণ্ডের দিকে শক্ত ব্যান্ডেজ লাগান। তবে খুব বেশি শক্ত করবেন না যাতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত না হয়।
*গহনা খুলে ফেলুন: কামড়ের স্থানে যদি আংটি, চুড়ি বা অন্য কোন গহনা থাকে তা খুলে ফেলুন। কারণ, কামড়ের স্থান ফুলে যেতে পারে।
*খাবার ও পানীয় দেবেন না: আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার বা পানীয় দেবেন না।
*ত্বরিত চিকিৎসা: দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যান।

যা করা যাবে না:

*কাটাছেঁড়া করবেন না: কামড়ের স্থান কেটে বা ছিদ্র করে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
*মুখ দিয়ে বিষ শুষে নেবেন না: এটি বিপজ্জনক এবং বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
*ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা: ওঝা, কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবেন না।
*বিষণ্ণতা ও ঘুমের ঔষধ: এই ধরণের ঔষধ ব্যবহার করবেন না কারণ এটি বিষের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অতিরিক্ত তথ্য:

*রাসেল্স ভাইপার সাপের বিষ রক্ত ​​​​পাতলা করে, ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেশী ব্যাথা, বমি বমি ভাব, বমি, মাথাব্যথা, ঘাম হতে পারে।
*এই সাপের কামড় মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য।
*সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমেই রাসেল্স ভাইপার সাপের কামড় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।


সারা দেশে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ বন্যা, বিপৎসীমার ওপরে ৫ নদীর পানি

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যাপ্রবণ প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে ধেয়ে আসছে বন্যা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে জানিয়েছে, পাঁচটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে উঠেছে। এদিকে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যায় জেলার ৯৭টি ইউনিয়নের এক হাজার ১৭৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে আটকা পড়েছেন ৭ লাখ ১ হাজার ৬৫৮ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও শেরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিডব্লিউডিবির কেন্দ্রীয় নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীতেও পানির উচ্চতা বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির উচ্চতা সার্বিকভাবে বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

প্রথম দফা বৃষ্টির পানি না শুকাতেই আবারও বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি স্রোতে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, জাদুকাটাসহ সব নদীর পানি আবার বাড়ছে। সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের বেশ কয়েকটি সড়ক। আবারও বন্যার কবলে পড়েছে জেলার আড়াই লাখ মানুষ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর সড়কটি ভেসে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষণে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সার্বিক বন্যা অবনতি দেখা দেয়। সোমবার সকাল হতে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলে উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক ভূমিধসে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে মহর্ষি নদীর খাইলকুড়া বাঁধ ভেঙে উপজেলার ১৫টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় ওইসব এলাকার শতাধিক মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকা ও উজানে অব্যাহত বর্ষণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নেত্রকোনায় ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রধান নদী উদ্ধাখালীর পানি বেড়ে সীমান্তের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী, কংশ ও ধনু নদীর পানিও বেড়েছে। জেলার সব নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।সংকট দেখা দিয়ে গোখাদ্যের।