একটানা ৩ মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামীলীগ দল। দীর্ঘ দিন দলটি ক্ষমতায় থাকয় প্রায় সময় নানা ইস্যু নিয়ে এই দলের নেতাক্রমীরা আলোচনা-সমালোনচরা সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি পদ-পদবি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরাও একে অন্যের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। এই নির্বাচনী প্রচারনায় এক বক্তব্যকে ঘিরে বির্তকে জড়িয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান।
‘আপনাদের শরীরে আমরা কোনো আঁচড় লাগতে দেব না, যদি আপনারা আমাদের ভাই হিসাবে থাকেন। ২৮ তারিখের নির্বাচনে মেম্বারের ভোটটি যাঁকে খুশি তাঁকে দেবেন, তবে নৌকার সিলটি দেখায়ে দেবেন। আমাদের সঙ্গে কোনো আপসে কথা হবে না।’ সম্প্রতি এক নির্বাচনী পথসভায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান এমন বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই নির্বাচনী পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন প্রমুখ। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মোখলেছুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘রাজনীতির শেষ হিসাব হচ্ছে নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের ভোটের দিনে যদি আপনাদের কাছে না পাই, আপনি বিবাহ করবেন আমার কাছে, আর শোবেন না, আর আপনি আমার বউ! এসব আর অত সহজ হবে না। ভাতারের ভাত খাবেন আর গীত গাবেন…। অত সহজ না। এই কারণে বারবার বলছি, ভুল কইরেন না। তাহলে আওয়ামী লীগে আর আপনাদের যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
একই পথসভার আরও একটি ভিডিওতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ইতিমধ্যে জেনে এসেছি, এই কুলবাড়িয়া গ্রাম পশ্চিম পাকিস্তান। এই পশ্চিম পাকিস্তানের আস্তানা যদি ভাঙতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নৌকাতে প্রকাশ্যে ভোট দিতে হবে। সদস্য ভোটটি গোপনে দিতে পারেন। যাঁরা নৌকাতে ভোট দেবেন না, তাহলে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ বসে থাকবে না। বিরোধী দলের লোক যাতে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন। আমাদের মন্ত্রী (জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন) বলেছেন, কুতুবপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইদ্রিস আলীকে নির্বাচিত করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনে মেহেরপুর জেলা সদরের কুতুবপুর ইউপিতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলী। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন সেলিম রেজা।
জানতে চাইলে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম রেজা বলেন, দলের নির্দেশনা রয়েছে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ করার। তবে জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে নির্বাচনী পথসভায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে করে নির্বাচন সম্পর্কে ভোটারদের মনে ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করে। ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেন যেতে না পারে। তবে জেলা প্র/শাস/ন ও পু/লি/শে/র ওপর আস্থা রয়েছে। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে। হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের আহ্বান করেছি। দেখিয়ে দিতে বলার অর্থ হচ্ছে নৌকাকে জেতানো বোঝানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা ভিডিও বানিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনসার বলেন, নির্বাচনে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। জেলা প্রশাসন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে বদ্ধপরিকর। এসব বক্তব্য চলমান নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে কোনো শঙ্কা তৈরি করতে পারবে না।
আওয়ামীলীগ দল বির্তকিত নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। এমনকি দলের মধ্যে থাকা বিরোধী নেতাদের জন্যও প্রদান করেছে নানা ধরনের সর্তকতা। দলেটির অনেক নেতাক্রমীরাই দলের সিদ্ধান্তের এবং নিয়ম নীতির বাইরে গিয়ে নানা ধরনের কাজ করছে। এতে করে দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এরই লক্ষ্যে এমন নেতাদের উদ্দেশ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ দল।