Thursday , November 21 2024
Breaking News
Home / National / ‘ওকে নিরাপদ জীবনের আশায় পাঠিয়ে ফেরত পেলাম লাশ’

‘ওকে নিরাপদ জীবনের আশায় পাঠিয়ে ফেরত পেলাম লাশ’

প্রীতি ওরাং, একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে শিশু। চা শ্রমিক বাবা-মায়ের পরিবার প্রতিদিন অভাব-অনটনে জর্জরিত। নিরাপদ জীবনের আশায় ১৩ বছর বয়সে মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান। দুই বছর ধরে তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কর্মরত ছিলেন।

কিন্তু নিরাপদ জীবন নিয়ে মায়ের বক্ষে ফিরেনি প্রীতি। তার নিথর দেহ ফিরে এসেছে। মেয়ের মৃত্যুর শোকে মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার কান্না থামছে না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আশফাকের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট থেকে নিচে পড়ে প্রাণ হারান প্রীতি। গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে প্রীতির মরদেহ কমলগঞ্জ উপজেলার মিটিঙ্গা চা বাগানে এলে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনায় পুরো চা বাগানের মানুষ হতবাক। প্রীতির এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না।

প্রীতির শেষকৃত্যের তিনদিন পেরিয়ে গেছে। তবে পুরো চা বাগান এলাকা এখনো শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রোববার সভা চা বাগানের ফাঁড়ির হালকি টিলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রীতির বাবা লুকেশ ওরাং, মা নওমিতা ওরাং, বোন স্বপ্না ওরাং ও ভাই সঞ্জয় ওরাং উঠানে বসে বিলাপ করছেন।
প্রীতির বাবা লুকেশ ওরাং নামের একজন চা শ্রমিক বলেন, “আমি মৌলভীবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক মিন্টুকে বিশ্বাস করে আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। তারপর তারা বলেছিল, সেখানে আমার মেয়ে ভালো খাবে, খুশি হবে এবং শিশুদের সঙ্গে খেলবে। বাড়ি.

মাসিক পরিশোধ করবে। কিন্তু আমার মেয়ে লাশ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি ফিরেছে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।
তিনি বললেন, আমরা গরীব মানুষ, একদিনে আনি, দিনে খাই। মিন্টু আমাকে অনেক প্রলোভন দেখালো। তিনি তার মেয়ের নিরাপদ জীবনের কথা বলেছেন। এক পর্যায়ে আমি তার সাথে একমত হয়ে যাই। মেয়েটি শুরুতে ১০ হাজার টাকা দেয়, পরে মিন্টু আরও ৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর আর টাকা দেওয়া হয়নি। কখনো ওই বাড়িতে নিয়ে যাইনি।’

লুকেশ বলেন, “দু’বছর ধরে ওরা আমার মেয়েকে দেখতে দেয়নি। একদিনও ছুটি দেয়নি। নানা অজুহাত ছিল। মাসে এক-দুবার গৃহকর্তার মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন।

এ সময় প্রীতির মা নওমিতা ওরাং বলেন, “সাংবাদিক বলেছেন, আমার মেয়ের বিয়েতে যা খরচ হবে, সবই তিনি বহন করবেন। মিন্টু সাংবাদিক বলেন, তোমার মেয়েকে ওই বাড়িতে দিয়ে দাও, সে সাংবাদিকের এক সন্তানের সঙ্গে খেলবে, ভালো করে খাবে। এখন। আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হবে, এটা আমি জানতাম না।আমি তাকে নিরাপদ জীবনের আশায় পাঠিয়েছিলাম এবং লাশ ফেরত পেয়েছি।

প্রীতির মামা লোজেন ওরাং বলেন, মেয়েটিকে অবশ্যই নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। প্রীতির সহপাঠীর প্রতিবেশী কবিতা ওরাং বলেন, আমি প্রীতির হত্যার বিচার চাই। একই কথা বলেছেন প্রীতির সৎ বোন স্বপ্না ওরাং।

মিটিঙ্গা চা বাগানের হালকি পাহাড়ের পূর্ব লাইনের বাসিন্দা অমৃত ওরাং বলেন, “বাড়ির কেউ হয়তো প্রীতির সঙ্গে কিছু করতে দেখেছে। তাই আমি মনে করি তাকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, মনু-দালাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক। বাগানের কেউ জানে না প্রীতি ওই সাংবাদিকের বাড়িতে কাজ করতে ঢাকায় গিয়েছিল। প্রীতির মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা তাকে গোপনে ঢাকায় পাঠায়। তদন্ত সাপেক্ষে প্রীতি হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল বলেন, প্রীতি হত্যার প্রকৃত ঘটনা তদন্তে সঠিকভাবে উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *