স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরী করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশে। দুজনেরই অবস্থান বেশ ভালো চাকরী ক্ষেত্রে। তবে বিপত্তি বেধে অন্য জায়গায়।পুলিশ স্বামীর বিরুদ্ধেই ভয়ংকর অভিযোগ তুলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রী। নির্যাতন, যৌতুক দাবি ও ভুয়া তালাকনামা দেখিয়ে আবার বিয়ে- এমন সব অভিযোগ উঠেছে সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। নারী নির্যাতন ও প্রতারণার মামলা করেন তারই স্ত্রী ওই নারী সার্জেন্ট। অভিযোগের সত্যতা উঠে এসেছে পিবিআই’র তদন্তে।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের নারী সার্জেন্টের সঙ্গে সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিয়ে হওয়ার পরবর্তী কয়েক দিন কোনো স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। বিয়ের পর থেকেই ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও মারামারিতে লিপ্ত ছিলেন। এরই একপর্যায়ে নারী কর্মকর্তার কাছে ১০ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল যৌতুক দাবি করেন সার্জেন্ট ওমর ফারুক। আর দাবি করা যৌতুক না পেলে ওমর ফরুক অন্য মেয়েকে বিয়ে করার হুমকিও দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত দলিল ও কাগজপত্র পর্যালোচনা এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া মামলায় উল্লেখ করা সাক্ষীসহ নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সঙ্গেও কথা বলার পর এসব তথ্য উঠে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্জেন্ট ওমর ফারুক নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিয়ে করার পর যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না পেয়ে বিয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় ওই নারীকে তালাক দেন ওমর ফারুক। এবং ওমর ফারুকের দেয়া তালাকটি বৈধ ছিল না। তাই তালাকটি কার্যকর হয়নি। সুতরাং সার্জেন্ট ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩)-এর ১১(গ) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা মামলায় বলেন, তিনি ও ওমর ফারুক একই সঙ্গে পুলিশের সার্জেন্ট পদে চাকরি পান। তারা ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যোগ দেন। ট্রেনিংয়ের সময়ই তাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওমর ফারুককে দ্রুত বিয়ের জন্য অনুরোধ করেন ওই নারী। মামলায় আরও বলা হয়, ওমর ফারুক ২০২০ সালের ৩১ জুলাই নারী কর্মকর্তার সরকারি কোয়ার্টারে যান। তখন আবার বিয়ের কথা বলায় ওই নারী কর্মকর্তাকে মারধর করেন ওমর ফারুক। এ ঘটনা তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসারকে জানালে তার ফোন ভেঙে ফেলেন ওমর ফারুক। ডিউটি অফিসার বিষয়টি উভয় কর্মকর্তার ইউনিটপ্রধানকে জানালে তারা তাদের পরিবারকে জানান। এরপর ওই রাতেই (১ আগস্ট রাত ২টা) আপসের মাধ্যমে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার কোয়ার্টারে তাদের বিয়ে হয়।
এজাহারে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিয়ের রাতেই তাকে মারধর, গালিগালাজ, হুমকিসহ যৌতুকের ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেল দাবি করেন ওমর ফারুক। পরবর্তী সময়ের যৌতুকের জন্য মারধরও করেন ওমর ফারুক। এমন অবস্থায় ২০২০ সালে ১৮ নভেম্বর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এরপর পুলিশ সুপার উভয়কে ডেকে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ সুপারের অফিস থেকে বের হয়েই আবার হুমকি ও যৌতুকের টাকা দাবি করতে থাকেন ওমর ফারুক।
মামলায় বলা হয়েছে, ওমর ফারুকের সঙ্গে আপস-মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে তাকে আদালতে মামলার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর আদালতে হাজির হয়ে মামলা করা হলে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। তদন্তে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সব অভিযোগের সত্যতা পান তদন্ত কর্মকর্তারা। পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এই অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, এটা প্রমাণিত যে সে (ওমর ফারুক) নির্যাতন করেছে, যৌতুক দাবি করেছে। আমদের তদন্তে বাদির দাবি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এ দিকে এই ঘটনা নিয়ে এখন দুই পরিবারের মধ্যে চলছে জোর বিরোধ। এ নিয়ে সেই ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সার্জেন্ট জানান, একজন আইনের লোক হয়ে এত বড় প্রতারণার শিকার হয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি। আমি অবশ্যই ন্যায় বিচার চাই। তবে এসব বিষয় একেবারেই উড়িয়ে দিয়ে অস্বীকার করেছেন তার স্বামী।