বাটাগুড়বাস্কা কাছিম মুলত একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির প্রানি। একসময় বাংলাদেশসহ ভারত এবং মিয়ানমারে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। তবে প্রায় ২০০০ সাল থেকে একে প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। এই বিলুপ্ত প্রানিটির অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ প্রায় কয়েকটি দেশ গবেষনামুলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এমনই একটি গবেষনার কাজে ব্যবহারিত স্যাটেলাইট সংযুক্ত করা কচ্ছপ জেলেদের জালে আটকা পড়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে জানা যায়।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় শনিবার জেলেদের জাল থেকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারসহ বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুড়বাস্কা কাছিম উদ্ধার করা হয়েছে। গাজীরহাট ক্যাম্প পুলিশ কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগকে খবর দেয়। এরপর রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে তাকে উদ্ধার করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যান। বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের সিএফ মিহির কুমার দে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে করমজলে নিয়ে আসি। পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এই প্রাণীরা প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে। এর বিলুপ্তি এবং অনুপস্থিতি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করে। তাই বিপন্ন কচ্ছপ সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য বিভিন্ন সরকারী ও প্রশাসনিক দপ্তরে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তা আরও ফলপ্রসূ হবে। কারণ এগুলো নদী-সাগর ও সুন্দরবনে ছেড়ে দিলে জেলেদের জালে আটকা পড়ে। পরে তাদের বাড়িতে বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন করা হয় এবং খাবারের জন্য বড় করা হয়। তাই অবশিষ্ট বিলুপ্তি রোধে প্রশাসন এলাকায় একটি প্রকল্প নির্মাণ করা জরুরি। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বাটাগুরবাস্কা প্রকল্পের স্টেশন ম্যানেজার আবদুর রব বলেন, ভারতের টাইগার প্রজেক্ট বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুরবাস্কা কাছিমের গতিশীলতা ও প্রজনন ক্ষেত্র সম্পর্কে জেনেছে।
১০টি পুরুষ কাছিম ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ১১ দিন শেষে তা নদী-সাগরে পরিণত হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাটে চলে যায়। ভারতের এরকম আরেকটি কচ্ছপ পূর্ব সুন্দরবনের বলেশ্বর ও সাউথখালী নদীতে বিচরণ করছে। ভারতে টাইগার প্রজেক্ট স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সহ ১০টি বাটাগুরবাস্কর সংগ্রহ করেছে এবং সেইসাথে ২০০টি কচ্ছপ সংগ্রহ করেছে। তিনি আরও জানান, এক সময় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে বাটাগুরবাস্কা প্রজাতির কাছিমের অস্তিত্ব ছিল। এখন এগুলো প্রায় বিলুপ্ত। এই দেশগুলির উপকূলীয় অঞ্চলে, একটি বা দুটির অস্তিত্ব যতটা সম্ভব কম। সেগুলো সংগ্রহ করে গবেষণার কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশ বন বিভাগ, অস্ট্রিয়া ভিজুয়েনা, আমেরিকার টিএসএ এবং ঢাকা নেচার অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুরবাস্কা প্রজাতির কচ্ছপের সংরক্ষণ, প্রজনন, গতি ও আচরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম খুঁজে বের করতে একযোগে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জেলেদের জালে আটকা পরা বাটাগুড়বাস্কা প্রজাতির কচ্ছপ এক প্রকার বিলুপ্ত প্রায় প্রানির তালিকায় অন্যতম একটি প্রাণী। এটি সংরক্ষিত করে এর প্রজনন,গতি, চলাচল, আচারনসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে একে আবার পুনরায় পরিবেশের মাঝে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশ গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পাওয়া স্যাটেলাইট সংযুক্ত এই কচ্ছপটি এমনই একটা গবেষনার অংশ বলে তথ্য নিশ্চিত করেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের প্রধান বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।